বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, শোষক, ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয়ে দেশের আপামর জনসাধারণ মুক্তিসংগ্রামে অংশ নিলেও গণমানুষের সে স্বপ্ন আজও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। দেশে আইনের শাসন ও গণতন্ত্র নেই। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে খাতা, কলম ও ল্যাপটপের পরিবর্তে মাদক ও অস্ত্র স্থান করে নিয়েছে। এমতাবস্থায় জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনে রাজপথে নেমে জনগণের অধিকার আদায় করতে হবে। এজন্য জামায়াত যেকোন ধরনের ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও স্বাধীনতার বাণী যিনি মানুষের কর্ণকূহরে পৌঁছে দিয়েছিলেন সেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সহ মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা সকল শহীদ ও জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
তিনি গতকাল রাতে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের উদ্যোগে অর্থবহ স্বাধীনতা ও নৈতিকমূল্যবোধ-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের আলোচনা রাখেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)র চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী ড. কর্নেল (অব) অলি আহমেদ (বীর বিক্রম)। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহানগরী উত্তর আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মুসা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর সহকারি সেক্রেটারি লস্কর মোহাম্মদ তসলিম, মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও ডা. ফখরুদ্দীন মানিক প্রমূখ।
আমীরে জামায়াত বলেন, জামায়াত একটি নিয়মতান্ত্রিক, সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক ও আদর্শবাদী রাজনৈতিক দল। অতীতে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জামায়াত সক্রিয়ভাবে শরীক হয়েছে এবং সকল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। কিন্তু জনগণ আমাদেরকে কখনোই হতাশ করেনি বরং জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সংসদে আমাদের প্রতিনিধিত্ব ছিল। কিন্তু কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল ও দিনের ভোট রাতে হওয়ার সংস্কৃতি চালু হওয়ার পর সংসদে জনগণের প্রতিনিধিত্ব নেই। তাই হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হলে দলমত নির্বিশেষে আবারও সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশ ও জাতির কল্যাণ এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যা করা প্রয়োজন জামায়াত তা-ই করবে। তিনি সকল জাতীয় সমস্যা সমাধানে সকলকে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে অংশ নেয়ার আহবান জানান।
ড. কর্নেল (অব) অলি আহমেদ (বীর বিক্রম) বলেন, বুকভরা আশা নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও আমরা শহীদ জিয়ার সাথে বিদ্রোহে অংশ নিয়েছি। পাকিস্তানী শাসকরা আমাদেরকে জোর করে শাসন করতে চেয়েছে। বিষয়টি উপলদ্ধি করতে পেরেই আমরা বঙ্গবন্ধুর কাছে স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য বারবার অনুরোধ জানিয়েছি। কিন্তু তিনি তাতে রাজী হননি। এখন দাবি করা হচ্ছে ৭ মার্চের ভাষণেই স্বাধীনতার ঘোষণা ছিল। কিন্তু তাদের সে দাবি মোটেই ঠিক নয়। কারণ, ৭ মার্চের পরও তিনি পাকিস্তানী শাসকদের সাথে আলোচনা চালিয়ে গেছেন। কিন্তু সে ভাষণ আমাদেরকে উজ্জীবিত করেছিল। মেজর জিয়া সেদিন স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলে ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হতো। তিনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকারীদের সম্পর্কে সকলকে সজাগ থাকার আহবান জানান।
তিনি বলেন, দেশে বিভেদের রাজনীতির চর্চা চলছে। আমাদের মধ্যে যে বিভেদ কাজ করছে কেউ জামায়াত, কেউ আওয়ামী লীগ, কেউ বিএনপি কেউ এলডিপি। এরা কেউ কাউকে দেখতে পারে না। এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না। আমাদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি চলছে করতে হবে। আগামীর সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ করতে হবে। আমরা যারা রাজনীতি করি তাদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, আমরা অর্ধশতাব্দী আগে স্বাধীনতা লাভ করলেও নেতৃত্বের ব্যর্থতার কারণে আমাদের স্বাধীনতা আজও অর্থবহ হয়ে ওঠেনি। দেশে গণমানুষের অধিকার হরণ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, কারাগারে মৃত্যু ও নারী নির্যাতনের মহোৎসব চলছে। মূল্যস্ফীতি ও আয় বৈষম্য এখন ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। কেড়ে নেয়া হয়েছে দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। এই শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে দলমত নির্বিশেষে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।