গত ১৩ অক্টোবর দিবাগত রাতে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর অসৎ উদ্দেশ্যে সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলায় পিতা ও চাচা কর্তৃক নির্মমভাবে ঘুমন্ত শিশুপুত্র তুহিনকে হত্যা করে তার কান এবং লিঙ্গ কেটে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখার নৃশংস ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও দুঃখ প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান আজ ১৬ অক্টোবর প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর অসৎ উদ্দেশ্যে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় পিতা ও চাচা কর্তৃক ঘুমন্ত শিশু পুত্রকে নির্মমভাবে হত্যা করে তার কান এবং লিঙ্গ কেটে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখার নৃশংস ঘটনায় আমি গভীর উদ্বেগ ও দুঃখ প্রকাশ করছি এবং ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে এ ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
এ ধরনের নিষ্ঠুর পাশবিকতার ঘটনায় আমরা বিস্মিত ও মর্মাহত। এ ঘটনা দেশের চিন্তাশীল সুশীল সমাজসহ সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। সকলের একটিই প্রশ্ন আমাদের দেশের সমাজ ব্যবস্থা তো পূর্বে কখনো এমন ছিল না, আমাদের সমাজ ব্যবস্থা কেন এমন হলো? উচ্চ শিক্ষিত থেকে শুরু করে সমাজের সাধারণ মানুষের মধ্যেও এ ধরনের নৃশংসতা ও পাশবিক উন্মাদনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তার জ্বলন্ত উদাহরণ হলো বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্তৃক পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা। বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের খবরে দেখা যাচ্ছে যে, লক্ষ্মীপুরে ১০টাকা চাওয়ায় ৮ বছরের শিশুকে তার মা গলাটিপে হত্যা করেছে। গত ৯ মাসে হত্যা করা হয়েছে ৩২০টি শিশুকে। মাদারীপুরের কালকিনিতে ১৪ দিন বয়সের নবজাতককে পানিতে ফেলে হত্যা করেছে তার মা। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে যে, গত ৯ মাসে আপন মায়ের হাতে নিহত হয়েছে ২৮টি শিশু। এছাড়াও ধর্ষনের পরে হত্যা করা হয়েছে ২৯টি শিশুকে এবং ২৩টি শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে। গত ৫ বছরে সারাদেশে ১,৬৩৪টি শিশুকে হত্যা করা হয়েছে।
উপরের উদাহরণগুলো থেকে দেখা যায় যে, ঘরে-বাইরে, অফিসে, আদালতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, শিল্প কারখানাসহ সমাজের সর্বস্তরেই চলছে নৃশংসতা, পাশবিকতা, শিশু ও নারী ধর্ষণ, নির্যাতন এবং নির্মমভাবে হত্যা। কোথাও মানুষের জানমালের-ইজ্জত-আবরুর কোন নিরাপত্তা নেই। সর্বত্রই চলছে পাশবিকতা ও নৃশংসতার জয়জয়কার। বর্তমান ক্ষমতাসীন কর্তৃত্ববাদী সরকারের ক্ষমতা দখলের পর থেকেই মানুষের মধ্যে চরম নৈতিক অবক্ষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি ও ক্ষমতায় টিকে থাকার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার কারণে তাদের মধ্যেও নৈতিক মূল্যবোধ ও মানবিকতার চরম বিপর্যয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারাও ঘুষ, দুর্নীতি, মাদকাসক্ত ও হত্যা, ধর্ষণ, গুম ইত্যাদি অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েছে।
সরকার নিজেই যেখানে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের কর্ম-কর্তাদের ঘুষ প্রদানসহ অবাঞ্ছিত সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ক্ষমতায় থাকার ষড়যন্ত্র করে সেখানে রাষ্ট্র এবং সমাজের সর্বস্তরেই নৈতিক অবক্ষয় ও পাশবিক উন্মক্ততা সৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক। দেশের সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানেই ছাত্রলীগ টর্চার সেল তৈরী করে ছাত্রদের হত্যা করছে এবং অত্যাচার-নির্যাতন চালাচ্ছে। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের প্রশাসন এবং সরকারের প্রশাসন ও আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের সহযোগিতা করছে। এ রকম একটি পরিবেশ যে সরকার সৃষ্টি করেছে, সে সরকারের নিকট প্রতিকার চাওয়াটা আর একটি অপরাধের শামিল।
এমতাবস্থায় রাষ্ট্র ও সমাজকে এ নৈতিক অধ:পতন ও উচ্ছৃংখলতা, পাশবিক উন্মক্ততা, অমানবিকতা থেকে উদ্ধার করার জন্য ইসলামের সুমহান শিক্ষার আলোকে ধর্মীয়, নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণ নিরাপদ গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে এগিয়ে আসার জন্য আমি দেশের সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, আইনজীবী, বুদ্ধিজীবী, ছাত্র-শিক্ষক, ওলামায়ে কেরাম, কৃষক, শ্রমিকসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”