বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সংস্কৃতি ও সভ্যতা শব্দ দু’টি আলাদা হলেও প্রকৃত পক্ষে সংস্কৃতির ভীতের উপর দাঁড়িয়ে আছে সভ্যতার মহান সৌধ। কিন্তু মানবজাতি সৃষ্টির পর থেকেই সংস্কৃতির সঙ্গে সভ্যতারও পরিবর্তন ঘটেছে। এই পরিবর্তনে আমরা আমাদের প্রকৃত সংস্কৃতি ভুলে গিয়ে আকাশ সংস্কৃতির নামে বিজাতীয় অপসংস্কৃতির গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিয়েছি। অথচ মহান সৃষ্টিকর্তা মানবজাতির নিকট যুগে যুগে নবী-রাসূল পাঠিয়ে আমাদের এমন সংস্কৃতির শিক্ষা দিয়েছেন যেখানে রয়েছে শান্তির বার্তা, গঠনমূলক দর্শন ও মানবতার সার্বিক কল্যাণ। কিন্তু নবী-রাসুলের শেখানো সেই সংস্কৃতির সঙ্গে অব্যাহত দ্বন্দ্ব লেগেই আছে বিজাতীয় অপসংস্কৃতির। যা মুসলমান হিসেবে আমাদের কখনো কাম্য নয়। কেননা প্রিয় নবী আগমনের পূর্বে আরবে যে জাহেলি সংস্কৃতি বিরাজমান ছিল আল্লাহর রাসূল তাওহীদের বাণী প্রচারের মাধ্যমে মানবজাতিকে তার থেকে রেহাই দিয়ে পাপ পঙ্কিলতামুক্ত শুদ্ধ সংস্কৃতির একটি সুন্দর, সোনালী সমাজ বিনির্মাণ করেছিলেন। তাই বিশ্বে চলমান সংস্কৃতির সংকট মোকাবেলায় রাসূল সা. এর আদর্শ অনুসরণের বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরী আয়োজিত জাতীয় সীরাত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মুহাম্মদ শাহজাহান এর সভাপতিত্বে ও মহানগরী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমীন এর সঞ্চালনায় সেমিনারে প্রধান আলোচকের বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইসলামিক ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মাওলানা সাইয়্যেদ কামাল উদ্দিন জাফরী। উক্ত সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন নগর জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমীর ও সেমিনার বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আজম ওবায়দুল্লাহ, অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নগর নায়েবে আমীর বিশিষ্ট পরিবেশবিদ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, নগর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমীন, এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মুহাম্মদ উল্লাহ ও ফয়সল মুহাম্মদ ইউনুস, সাংগঠনিক সম্পাদক এম এ আলম চৌধুরী, মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী , কর্মপরিষদ সদস্য ডা. মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ।
প্রধান অতিথি বলেন, আল্লাহর প্রেরিত শেষ নবী মুহাম্মদ সা. ইসলামের মূল বুনিয়াদ তাওহীদের বাণী প্রচারের মাধ্যমে দুনিয়ায় যে সংস্কৃতির উপর ভর করে সভ্যতা গড়তে যাত্রা করেছিলেন, মুসলমানরা তা বেমালুম ভুলে গিয়ে বস্তুবাদী সংস্কৃতির পেছনে ছুটছে। ফলে সমাজে চরম বিশৃঙ্খলতা ও অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে সবাই শান্তি খুঁজছে। কিন্তু শান্তির সেই সুবাতাস সুদূর পরাহত। কেননা আমরা স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ উপহার মানব কল্যাণের মহৌষধ পবিত্র কুরআন থেকে সরে যাওয়ার কারণে পৃথিবী আজ শান্তি থেকে যোজন যোজন দূরে। তাই ভোগবাদী জীবন ছেড়ে পবিত্র কুরআন অনুসরণ করার মধ্য দিয়ে হেরার আলোয় উদ্ভাসিত সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে জীবনে শান্তি নিশ্চিত করার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
প্রধান আলোচক প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন ড. সাইয়্যেদ কামাল উদ্দিন জাফরী বলেন, আল্লাহর পবিত্র কালামের আলোকে রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিবর্তন করাই সভ্যতার সবচেয়ে বড় বিবর্তন। আমাদেরকে সেই কালামের দাওয়াত দিয়েই সভ্যতা পরিবর্তন করতে হবে। এই পরিবর্তনের জন্য সফলতার প্রত্যাশা করা নয় বরং তার জন্য আমাদের সার্বক্ষণিক চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। কেননা সফলতা কখনো আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত ধরা দেয় না। নিজের মতো করে সংস্কৃতির চর্চা করতে গিয়ে মুসলমানরা তার নিজস্ব সংস্কৃতিকে জলাঞ্জলি দিয়েছে। এজন্য সমাজ চরম বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েছে। এই বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে আমাদেরকে কুরআন তথা রাসূলের শেখানো সংস্কৃতির কাছে ফিরে যেতে হবে। এতেই আমরা মানবজাতির প্রকৃত কল্যাণ নিশ্চিত করতে সক্ষম হবো।
সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট ইসলামী স্কলার প্রফেসর ড. আবু বকর রফিক। তিনি বলেন, পৃথিবীর কোথাও যখন কোন আশার আলো পরিদৃষ্ট নয়, তখন সমাজ ব্যবস্থায় সংকট ও অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। পৃথিবী জুড়ে যখন ভয়াবহ বিভৎসতা, অরাজকতা দেখা দিয়েছিল তখন সেই অরাজকতার ঘোর অন্ধকার থেকে জ্বলে উঠেছিল মানবতার শ্রেষ্ঠতম বন্ধু বিশ্বনবীর আলোর মশাল। সেই মশাল সমকালীন সামাজিক বিপর্যয়ের অন্ধকার থেকে বিশ্বকে উদ্ভাসিত করেছিল। তাওহীদের বাণীকে সংস্কারের মূল লক্ষ্য হিসেবে নবী সা. সভ্যতা ও সংস্কৃতির সংকট মোকাবেলায় যে কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করেছিলেন তার বদৌলতে তিনি নিরক্ষর ও জাহেলিয়াতের নিগূঢ় অন্ধকারে নিমজ্জিত, গোমরাহীর অতল গহ্বরে নিপতিত একটি বেদুঈন জনগোষ্ঠীকে পরিকল্পিত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদেরকে সকল প্রকার কলুষতা মুক্ত করে এমন এক আদর্শ প্রজন্ম বিশ্ববাসীকে উপহার দিয়েছেন যার দ্বিতীয় কোন নজীর বিশ্বে আর কেউ দেখাতে পারেনি। এজন্য সংস্কৃতির সংকট মোকাবেলায় আমাদেরকে রাসূলের সেই পথে হাঁটতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, বিশ্ব নবীর জীবনের সকল বিষয় অতুলনীয় ও ভারসাম্যপূর্ণ। আর সত্যিকার জ্ঞান হলো অহীর জ্ঞান, এটি ছাড়া সকল জ্ঞানই অসম্পূর্ণ। তাই ক্ষতবিক্ষত এ সভ্যতা থেকে মুক্তি পেতে হলে রাসুলের রেখে যাওয়া জ্ঞান ও আদর্শকে গ্রহণ করতে হবে। প্রচলিত এ জুলুমতন্ত্রের পর বিশ্বনবীর আদর্শেই গোটা দুনিয়া হেরার আলোয় জেগে উঠবে এমন প্রত্যাশা জানিয়ে রাসুল সা. এর আদর্শে সভ্যতা বিনির্মাণ ও তাওহীদ ভিত্তিক সমাজ গঠনে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
মহানগরীর অন্যান্য সকল নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন পেশাজীবি, বিশিষ্টজন, ব্যবসায়ী, ছাত্র ও যুবসমাজ সহ সর্বস্তরের সহস্রাধিক জনসাধারণ এ সম্মেলন উপভোগ করেন।