বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জাতি হিসেবে আজ আমরা চরম লজ্জিত। এক এক করে সর্বহারা জাতিতে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। পূর্ব পাকিস্তান সময়ে ২৩ বছর এবং বাংলাদেশ সময়ের এই ৫০ বছর অতিক্রান্ত হলেও দেশের মানুষ স্বাধীনতার যে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছিল তা আজও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ল্যান্ডস লাইট অবস্থানে ছিলো এদেশে আওয়ামীলীগ। যদিও ঐ সময়ে পশ্চিম পাকিস্তানে তারা কোন আসন পাননি। তবে এটাও সত্য যে পাকিস্তানের নির্বাচনের সার্বিক ফলাফলে পুরো দেশের শাসনভার আওয়ামীলীগের হাতেই দেয়া যৌক্তিক ছিলো। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকেরা আওয়ামীলীগকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব থেকে বঞ্চিত করে। জনগণের দেয়া সমর্থন রায়কে তারা মেনে নিলো না। গণতন্ত্রের হাতিয়ার ভোট, সেই ভোট সমর্থনকে পশ্চিম পাকিস্তানের নেতারা অগ্রায্য করলো। প্রকৃত পক্ষে তখন থেকেই মূলত এ অংশে বাংলার জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানীদের প্রতি তীব্র ক্ষোভ দানা বাঁধলো। এই ক্ষোভই সত্যিকার অর্থে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিস্ফোরিত হলো।
তিনি শুক্রবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত দায়িত্বশীল সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। সম্মেলনটি ভার্চুয়াল মাধ্যম জুম লাইভে অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জননেতা নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম, কেন্দ্রীয় সহঃ সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আজাদ, কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারি সেক্রেটারি মু. আবদুল জব্বার, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, শামসুর রহমানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জামায়াত নেতৃবৃন্দ।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানিরা গায়ের জোরে বাংলাদেশ এ অংশের জনগণকে দমন করতে মরিয়া হয়ে উঠলো। জনগণের সমর্থনে যদি তৎকালীন সময়ের শাসকেরা ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রদান করতো তাহলে হয়তো আজ বাংলাদেশের এই চরম অবস্থা দেখতে হতো না। আমি নিজেও একটি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য। আমার ভাই তৎকালীন সময়ে ইপিআরএ একজন কর্মকর্তা ছিলেন। ছুটিতে যখন তিনি বাড়িতে আসতেন তখন ভাই হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথা নানা কথা আমাদের শোনাতেন। দেশ গঠনে সেসব কথা শুনে আমরা অনুপ্রাণিত হতাম। একজন মুসলমানের পারিবারিক জীবন, সমাজের সাথে তার ব্যবহার, মানুষের কল্যাণের জন্য সে কি ভূমিকা রাখবে বা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহপাক মুসলিম হিসেবে তাঁকে যে দায়িত্ব বা কাজের নির্দেশনা দিয়েছেন সবকিছু ভুলিয়ে রাখার জন্য গভীর ষড়যন্ত্র বিদ্যমান। আমরা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একজন দায়িত্বশীল, আল্লাহর গোলামী করার জন্য আমরা আত্ম-নিবেদিত। এজন্য কুরআনের বিধানের আলোকে নিজেকে তৈরী করে দেশ সমাজ ও জাতি গঠনে আমরা প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাবো। যারা সব সময় আমাদের বিরোধীতা করছেন, আমরা তাদেরকে আমাদের বন্ধু, ভাই-বোনের ন্যায় মনে করি। তাদের হেদায়াতের জন্য আমরা মহান রবের নিকট দোয়া অব্যাহত রাখবো ইনশাআল্লাহ।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, একজন দায়িত্বশীল হিসেবে আমার কি দায়িত্ব? দায়িত্বের দাবী যথাযথভাবে আমি পালন করতে পারছি কিনা এ উপলব্ধি প্রত্যেক দায়িত্বশীলকে করতে হবে। আমরা উপলব্ধি এবং জবাবদিহির চেতনা যদি লালন করতে না পারি তাহলে আমি একজন দায়িত্বশীল হিসেবে সে দাবী পূরণে ব্যর্থ।
নূরুল ইসলাম বুলবুল সভাপতির বক্তব্যে বলেন, সংগঠনের পক্ষ থেকে যে সব কর্মসূচী আসবে সেগুলোতে অধিন্যস্ত সকলকে সম্পৃক্ত করতে হবে। যেন মানসম্পন্ন নেতৃত্ব পরিণত করার মধ্য দিয়ে দুনিয়ার পরিবর্তন সাধন করার যোগ্যতা অর্জন এবং পাশাপাশি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার লক্ষ্যে যাবতীয় কর্মতৎপরতা বজায় রাখা যায়। তিনি ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে ঈমানদারদেরকে সকল বিভ্রান্তির মোকাবেলায় একটি ভারসাম্যপূর্ণ পন্থা অবলম্বন করে ভূমিকা রাখার জন্য উদাত্ব আহবান জানান।