বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক বৈঠক আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। সভাপতির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশ। এ সরকার দেশের সংবিধান ও মানুষের ধর্মীয় বিধানকে লংঘন করে মদের লাইসেন্স প্রদান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এমনকি কোনো এলাকায় ১০০ জন মদ সেবনকারী থাকলে সেখানে মদের দোকান খোলারও অনুমতি প্রদান করেছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক ও অনৈসলামিক। জনগণ এ সিদ্ধান্ত মানে না। এ সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।
আমীরে জামায়াত আরো বলেন, সরকার কর্তৃক ভোজ্য তেল ও এলপিজি গ্যাসসহ জিনিসপত্রের দাম বারবার বাড়ানো হচ্ছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য হু-হু করে বাড়ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্দ্ধগতিতে দেশের জনগণের জীবন নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার নয়। তাই জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতাও নেই। সরকারের প্রশাসনে শৃঙ্খলা বলতে কিছু নেই। দেশে ঘুষ-দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। প্রশাসন ও সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘুষ-দুর্নীতি ঢুকে পড়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর আমীর বলেন, দেশে আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বলতে কিছু নেই। জনগণকে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার পাঁয়তারা চলছে। সংবিধান স্বীকৃত সভা-সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। সংবিধানকে আজ প্রকাশ্যভাবে অবজ্ঞা করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, বিরোধীদলসহ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের যখন-তখন অন্যায়ভাবে বিনা কারণে আটক করা হচ্ছে। বিরোধী মতের নেতা-কর্মীদেরকে নির্বিচারে মিথ্যা সাজানো মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে এবং তাদেরকে গ্রেফতার করে জেলে আটকিয়ে রাখা হচ্ছে। বিরোধী পক্ষের নেতাকর্মীদের উপর জুলুম-নির্যাতন চালানো সরকারের একটি রুটিন ওয়ার্কে পরিণত হয়েছে। গোটা দেশ আজ একটি বৃহৎ জেলখানায় পরিণত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এই সরকার জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে। গত ১২ বছরে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। আওয়ামী সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান কখনো সম্ভব নয়। জনগণ আর রাতের আঁধারের প্রহসনের নির্বাচন দেখতে চায় না। একমাত্র কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থার অধীনেই নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত হতে পারে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সকল রাজনৈতিক দল ও আপামর জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে জোর আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সাথে জুলুম-নিপীড়ন বন্ধ করে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানসহ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের গ্রেফতারকৃত সকল নেতা-কর্মীকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”