বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ আজ ভাল নেই। তাই আমরা কেমন আছি তা ব্যাখ্যা করে বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের পুরো বাংলাদেশ আজ বৃহৎ কারাগারই নয়, পুরো দেশ আজ কবরস্থান হয়ে আছে। কবর বাসীরা যেমন নীরব থাকে, সেভাবেই দেশের আজ বিরোধী মতের মানুষকে নিরব থাকতে হচ্ছে। এভাবে কোন দেশ চলতে পারেনা। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতে হবে। সকল কঠিন পরিস্থিতিতে জামায়াত হক্ব ও ন্যায়ের পথে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এজন্য আমাদের ১১ জন দায়িত্বশীলকে শাহাদাতবরণ করতে হয়েছে। কাউকে ফাসি দিয়ে কাউকে জেলে নির্যাতনের শিকার হয়ে, কাউকে মানসিকভাবে যন্ত্রণা পেয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। তবুও আমরা মুক্তির লড়াইয়ে ময়দানে টিকে রয়েছি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সকল জুলুম-নিপীড়ন উপেক্ষা করে রুখে দাড়াতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
তিনি বলেন, মাহে রমজান হচ্ছে মানবতার মুক্তি সনদ মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাযিলের মাস। এই মাসে নিজেদেরকে পরিপূর্ণ মুত্তাকী হিসেবে গড়ে তোলার শপথ নিতে হবে। এই মাসে কুরআন হাদীসের আলোকে জীবন পরিচালনার পাশাপাশি ইনসাফভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে সবাইকে কাজ করতে হবে। কুরআনের বিজয়ের মাস মাহে রমজানের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে ঐক্য অটুট রেখে এদেশে ইসলামী জাগরণ তৈরীর সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে।
তিনি বৃহস্পতিবার সিলেট মহানগর জামায়াতের উদ্যোগে সাংবাদিক, পেশাজীবি, বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ ও রাজনীতিবিদদের সম্মানে অনুষ্ঠিত মাহে রমজানের তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও সিলেট মহানগর আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মোহাম্মদ শাহজাহান আলীর পরিচালনায় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ইফতার মাহফিলটি একটি মিলন মেলায় পরিণত হয়। মাহফিলে বিশিষ্ট আইনজীবি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক, সিলেটে কর্মরত ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদ কর্মী, কবি, সাহিত্যিক, চিকিৎসক এর পাশাপাশি সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। মাহফিলে দেশ-জাতির মঙ্গল ও জাতীয় নেতৃবৃন্দের মুক্তি-সুস্থতা কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন শায়খ ইসহাক আল মাদানী।
ক্বারী তাহমিদুল ইসলাম তুহিনের পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সুচীত মাহফিলে দারসুল কোরআন পেশ করেন হাজী কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফিজ মাওলানা মিফতাহুদ্দীন আহমদ। ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেন হোসাইন শাহরিয়ার রাজী।
মাহফিলে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, জামায়াতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারী অধ্যাপক ফজলুর রহমান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমীর ভাষা সৈনিক অধ্যক্ষ মাসউদ খান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী।
মাহফিলে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও সিলেট জেলা দক্ষিণের সাবেক আমীর মাওলানা হাবীবুর রহমান, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুকতাবিস উন নূর, সিলেট জেলা বিএনপির নবনির্বাচিত সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট মোঃ সামছুল হক, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ লে. কর্ণেল (অব.) সৈয়দ আলী আহমদ, জেলা দক্ষিণ জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান, জেলা উত্তরের আমীর হাফিজ আনোয়ার হোসাইন খান ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সিলেট মহানগর সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ফারুক।
মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নাসিম হোসাইন, সিলেট মহানগর জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমীর হাফিজ আব্দুল হাই হারুন, মহানগর নায়েবে আমীর মাওলানা সোহেল আহমদ, সিলেট মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আজমল বখত চৌধুরী সাদেক ও এমদাদ হোসেন চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট হাসান আহমদ পাটোয়ারী রিপন, সিলেট মহানগর খেলাফত মজলিসের সভাপতি অধ্যাপক বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা তাজুল ইসলাম হাসান, ইসলামী ঐক্যজোটের সিলেট জেলা সভাপতি মুফতী ফয়জুল হক জালালাবাদী, জেলা জমিয়তের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান, এলডিপির সিলেট জেলা সভাপতি সায়েদুর রহমান চৌধুরী রুপা, লেবারপার্টির সিলেট মহানগর সভাপতি মাহবুবুর রহমান খালেদ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি আন্দালিব পার্থ) সিলেট জেলা আহ্বায়ক মোজাম্মেল হোসেন লিটন, ইসলামী চিন্তাবিদ অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল সালাম আল মাদানী, সিলেট জেলা দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারী মো: নজরুল ইসলাম, জেলা উত্তরের সেক্রেটারী মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, কাউন্সিলার আব্দুল মুহিত জাবেদ, সোহেল আহমদ রিপন, সিলেট প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি আব্দুল কাদের তাপাদার, সাবেক সহ-সভাপতি এনামুল হক জুবের ও আমজাদ হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ, সিনিয়র সাংবাদিক হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, মুহিব আলী, কবির আহমদ সোহেল, খালেদ আহমদ, মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী এডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুর রব ও ড. নুরুল ইসলাম বাবুল, জামায়াত নেতা সৈয়দ ফয়জুল্লাহ বাহার, মাওলানা ইসলাম উদ্দিন প্রমূখ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, দেশ ও জাতি চরম ক্রান্তিকাল অতিবাহিত করছে। জাতির ঘাড়ে জগদ্দল পাথরের ন্যয় চেপে বসা স্বৈরাচারী সরকারের হাত থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হবে। রমজানের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে সমাজের সকল স্তরে ন্যায় ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার শপথ নিতে হবে।
ভাষা সৈনিক অধ্যক্ষ মাসউদ খান বলেন, মাহে রমজান হচ্ছে কুরআন নাযিলের বরকতময় মাস। এই মাসে আত্মশুদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে নিজেকে মুমিন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। কুরআনের শিক্ষা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার শপথ নিতে হবে। তাহলে ইহকালিন সাফল্য ও পরকালিন মুক্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিয়াম সাধনার মাস মাহে রমজানের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে বিভাজন-বিভক্তির রাজনীতি পরিহার করতে হবে। সকলে মিলে এই নগরী ও এই দেশকে নিজেদের মত করে সাজানোর প্রতশ্রুতি গ্রহণ করি। ফ্যাসিস্ট সরকারকে প্রতিহত করতে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের জন্য নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাইকে কাজ করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন- পবিত্র মাহে রমজান হচ্ছে কুরআন নাজিলের মাস। এই পবিত্র মাসে ইসলামের প্রাথমিক এবং চুড়ান্ত বিজয় নিশ্চিত হয়েছিল। তাই আত্মশুদ্ধির মাস মাহে রমজান থেকে শিক্ষা নিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দৃঢ় শপথ নিতে হবে। সকল জুলুম নিপীড়ন উপেক্ষা সত্য ও ন্যায়ের পথে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।