বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, ইসলাম হচ্ছে বিশ্বজনীন ধর্ম। আর মুসলমানরা হচ্ছে বিশ্বজনীন জাতি এবং বিশ্বজয়ী জাতি। তাই মুসলমানদেরকে গোটা বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। আমরা কুরআন হাদীসের আলোকে সমাজকে বদলাতে চাই। এজন্য আগে নিজেকে বদলাতে হবে। মাহে রমজানের শিক্ষার আলোকে নিজেকে পরিপূর্ণ মুত্তাকী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। নিজেকে আল্লাহর খাঁটি গোলামে পরিণত করতে হবে।
তিনি বলেন, দেশে ইসলামী আন্দোলন চরম ক্রান্তিকাল অতিবাহিত করছে। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের ওপর জুলুম-নিপীড়ন চলছে। শুধু তাই নয়, দেশের সর্বত্র করুন পরিস্থিতি বিরাজমান। চতুর্দিকে মানুষের আর্তচিৎকার আর হাহাকার। বঞ্চিত ও নির্যাতিত মানুষ আজ মুক্তির অপেক্ষায় প্রহর গুণছে। এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে মানুষ নির্যাতিত হচ্ছেনা। আজ ঘরে বাইরে কোথাও কেউ নিরাপদ নয়। নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-শিশু কেউ আজ সুরক্ষিত নয়। এভাবে কোন জাতি চলতে পারেনা। সমাজ বদলানোর ইশতেহার নিয়েই জামায়াতের কর্মসূচী। এজন্য সবার আগে নিজেকে বদলানোর শপথ নিতে হবে।
তিনি শুক্রবার সিলেট মহানগর জামায়াত আয়োজিত ভার্চুয়াল ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মোহাম্মদ শাহজাহান আলীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে দেশের ও দেশের বাইরে থেকে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দ অংশ নেন এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জবুায়ের, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক ফজলুর রহমান, জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও সিলেট জেলা দক্ষিণের সাবেক আমীর মাওলানা হাবীবুর রহমান, জেলা দক্ষিণের আমীর অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান, জেলা উত্তরের আমীর হাফিজ আনোয়ার হোসাইন খান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সিলেট মহানগরীর সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ফারুক।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান। আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার চেয়ে উত্তম কোন কাজ আর নেই। দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে হলে আমাদেরকে তাক্বওয়াবান হতে হবে। ইসলামী আন্দোলনের পথ সব সময়ই কঠিন ছিল আজো কঠিন আছে। তবে আল্লাহর বিধানমতে জীবন পরিচালনা করতে পারলে, দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সক্রিয় থাকলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য আসবে, এটা চিরায়ত সত্য। সকল জুলুম নিপীড়ন উপেক্ষা করে ইসলামী আন্দোলন তার কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছবে ইনশাআল্লাহ। ইসলামের বিজয় রুখে দেয়ার সাধ্য কারো নেই। যদি আমরা সত্যের পথে অবিচল থাকি। তাহলে আমাদের ইহকালের সাফল্যের পাশাপাশি পরকালিন মুক্তির পথ প্রশ্বস্ত হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ইসলাম মানুষকে মানবিকতার শিক্ষা দেয়। আজ ঈদ আনন্দকে শুধু একটি বিশেষ আনন্দ হিসেবেই উদযাপন করা হচ্ছে। অথচ ঈদ আনন্দ আমাদেরকে ভাতৃত্ববোধের শিক্ষা দিয়ে থাকে। আত্মশুদ্ধি অর্জনের মাস মাহে রমজানের পর ঈদ আনন্দ আমাদেরকে পরিপূর্ণ মুত্তাকী হয়ে দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আরো জোরালো ভূমিকার সুমহান শিক্ষা দিয়ে থাকে। তাই আমাদেরকে ইনসাফভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে জান ও মাল দিয়ে কাজ করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, ওলী-আউলিয়ার স্মৃতি বিজড়িত সিলেট হচ্ছে ইসলামী আন্দোলনের জন্য উর্বর ভূমি। সিলেটে ইসলামী আন্দোলনের ভীত মজবুতির পেছনে আমাদের অনেক ভাইয়ের ত্যাগ ও শ্রম জড়িয়ে রয়েছে। সিলেটে ইসলামী আন্দোলনকে বেগবান করতে দ্বীনি ভাইদের অগ্রনী ভুমিকা পালন করতে হবে। এক মাস সিয়াম সাধনার পর পবিত্র ঈদুল ফিতরের শিক্ষা বাস্তব জীবনে প্রয়োগের মাধ্যমে নিজেকে নৈতিকতাসম্পন্ন আদর্শবান সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার শপথ নিতে হবে।