সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে সিলেট, সুনামগগঞ্জ, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে বন্যাদুর্গত ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান ১৭ জুন এক বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “শতাব্দির রেকর্ড ভঙ্গ করে সিলেট ও সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে লাখো জনতা। আমি মহান আল্লাহর দরবারে বন্যাকবলিত মানুষের জন্য নতশিরে সাহায্য ভিক্ষা করছি।
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, সিলেট ও সুনামগঞ্জে মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে ফের ভয়াবহ বন্যা শুরু হয়েছে। সিলেটের কোনো মানুষ অতীতে এমন ভয়াবহ বন্যার কথা স্মরণ করতে পারছেন না। এবারের বন্যায় প্রধান প্রধান সড়ক আর নদীপথ সবই একাকার। সুনামগঞ্জ শহর পুরোটা এবং সিলেট শহরের বেশিরভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। ভয়াবহ বন্যার ফলে পুরো চার জেলাতেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হয়ে পড়েছে। তলিয়ে যাওয়া এলাকাগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। শহরের রাস্তাগুলোতে মাঝারি আকারের নৌকা চলছে। গ্রাম এলাকার অধিকাংশ মানুষ পর্যাপ্ত নৌকার অভাবে বন্যার পানিতে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন। শিশু-আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সকলেই এখন পানির মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছেন।
তিনি বলেন, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের বন্যার অবস্থাও একই রকম। বন্যার পানিতে বাড়িঘর ও জমির ফসল ডুবে যাওয়ায় মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অব্যাহতভাবে পানি বৃদ্ধির ফলে হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশু নিয়ে মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। বন্যাকবলিত অঞ্চলে খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। পানিবাহিত নানা রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদ-নদীর ভাঙনও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত বন্যার্তদের সাহায্যার্থে কোনো তৎপরতা জনগণের কাছে দৃশ্যমান হয়নি। সরকারের এ নীরব ভূমিকা জনগণকে বিস্মিত করেছে। সরকারের উচিত দ্রুত জনগণের পাশে দাঁড়ানো।
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, গভীর বেদনার বিষয় যে, এখন পর্যন্ত এ বিষয়টি সরকারের কাছে তেমন কোনো গুরুত্বই পায়নি। তাহলে কি সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর সরকারের চোখ খুলবে? অবিলম্বে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করে পানিবন্দি জনগণকে উদ্ধার ও পর্যাপ্ত ত্রাণ তৎপরতা চালানোর জন্য আমি সরকারের প্রতি বিশেষভাবে আহবান জানাচ্ছি। মনে রাখতে হবে যে, এ জেলা চারটিও বাংলাদেশের অংশ।
এই কঠিন পরিস্থিতিতে মজলুম সংগঠন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বন্যার্তদের জন্য আমি ৫০ লক্ষ টাকার ত্রাণ সহায়তা ঘোষণা করছি। সেই সাথে সর্বোচ্চ সহযোগিতা নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বশীল ও কর্মী ভাইদেরকে বন্যার্তদের সাহায্যার্থে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানাচ্ছি। সমাজের সামর্থবান ও হৃদয়বান ব্যক্তিদের কাছে আমাদের অনুরোধ, মানবিক এই বিপর্যয়ে যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালন করুন। আসুন, সবাই মিলে মহান প্রভুর দরবারে এ কঠিন বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ধরনা দেই। মহান আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন, আমীন।
উল্লেখ্য, ইতোমধ্যেই ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুমকে আহবায়ক ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরকে সমন্বয়ক করে ২২ সদস্যের ত্রাণ কমিটি গঠন করা হয়েছে।”