বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান বলেন, জাতির এই কঠিন ক্রান্তিকালে মানুশের পাশে দাঁড়ানো আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। সারা বাংলাদেশের মানুষের হক্ব আমার উপরে আছে কিন্তু আপনাদের এলাকার মানুষ হওয়ার কারণে আপনাদের হক্ব আমার উপরে আরেকটু বেশি। এমন একটি ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আমরা লক্ষ্য করেছি, মায়ের বুক থেকে শিশু বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে। আমরা যখন সে মায়ের কাছে গিয়েছি, ছেলে হারা মায়ের কষ্ট আমরা দেখেছি। এই ছেলের উসিলায় মহান আল্লাহ যেন আমাদেরকে ক্ষমা করে দেন। বন্যার এই তান্ডব এক সপ্তাহের উপরে চলেছে। কারো ঘরের ছাউনির উপর দিয়ে পানি গড়িয়েছে, কারো ঘরে হাঁটুপানি, আবার কারো ঘরে কোমর পানি। এ এক ভয়াবহ দৃশ্য। এ সময় মানুষ প্রাণপনে খুঁজেছে একটু নিরাপদ আশ্রয় পাওয়ার জন্য। মানুষ নৌকার খুজে দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলো। দৃশ্যটি এরকম ছিল যে, সারা সুনামগঞ্জ একটি সাগর আর গ্রামগুলো তার উপরে একেকটি কচুরিপানা। কেউ কাঁদছে তার সঙ্গী হারিয়ে, কেউ বাবা হারিয়ে, কেউ মা হারিয়ে, কেউ বোন হারিয়ে, দাদা হারিয়ে ভাই হারিয়ে স্বামীকে হারিয়ে। নিজের আপনজন কি করে বাঁচবে এই চিন্তায় অস্থির। তাদের মুখের দিকে তাকানো যায় না। এখানে কাউকে গরীব-মিসকিন ভাবার সুযোগ নেই। আপনারা আমাদের ভাই-বোন। কে কোন ধর্মের, কোন বর্ণের, কোন জাতের, এটা কোন বিষয় না, সবাই এখানে বিপদগ্রস্ত বন্যাদুর্গত মানুষ। বিপদ শুধু মুসলমানদের জন্য এখানে আসেনি সবার জন্যই এসেছে। বিপদ আসার পরে যারা মানুষের মধ্যে তারতম্য করে, ভাগবাটোয়ারা করে বিভেদ সৃষ্টি করে, এরা মানুষের পর্যায়ে পড়ে না। এদের আচরণ চতুষ্পদ জন্তুর মত। এমন একটি ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আমাদের দেশের সরকারের উচিত ছিলো, সবকিছু নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার। কিন্তু আমরা সেরকম কোন তৎপরতা লক্ষ্য করি নাই। আমরা বিপদগ্রস্ত মানুষের সাথে তখন তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করতে পারিনি, কিন্তু আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা ছিলো যোগাযোগ করার। কিছু সময় পরে হলেও আমরা বিভিন্ন উপায়ে মানুষের পাশে এসে দাড়িয়েছি। কারণ আমাদের কাছে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করার মতো হেলিকপ্টার ছিল না, স্পীডবোট ছিলো না। কিন্তু জনগণের ট্যাক্সের টাকায় কারো কারো হাতে সেসব উন্নত যোগাযোগ মাধ্যম ছিলো, কিন্তু তারা সেভাবে যোগাযোগ করেননি। বাংলাদেশে ক্যাবিনেট আছে, সেখানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় আছে, দায়িত্বরত একজন মন্ত্রী আছেন, তিনি কেন এই দুর্দশাগ্রস্ত বিপদগ্রস্ত বন্যা দুর্গত মানুষদের খোঁজ-খবর নিলেন না, সেখানে পরিদর্শন করলেন না, মানুষের পাশে দাঁড়ালেন না? আমরা এমন একটি দেশ চাই, যেখানে মানুষ নিরাপদে থাকবে, সন্ত্রাসীদের ভয়ে ছেলে-মেয়েরা ভীতসন্ত্রস্থ হবে না। হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে শক্তি দিন, আমরা যেন এমন একটি দেশ গড়তে পারি। আমরা মহান আল্লাহর কাছে বলি আপনি আমাদেরকে ব্যর্থ করবেন না।
তিনি ১২ জুলাই মঙ্গলবার সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে খাদ্য ও বিভিন্ন উপহার সামগ্রী বিতরণকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন।
আমীরে জামায়াত গতকাল ঈদের ৩য় দিনের মতো দিনভর সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাদেপাশা ইউনিয়নে বাগলাবাজার, এরপর শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের মেহেরপুরবাজার এবং শরীফগঞ্জবাজার, ভাদেশ্বর ইউনিয়নের মীরগঞ্জবাজার ও খুমিয়া এলাকায় বন্যা কবলিত মানুষের সাথে ঈদের কুশল বিনিময় ও তাদের মাঝে খাদ্য এবং বিভিন্ন উপহার সামগ্রী বিতরণ করেন।
এ সময় আমীরে জামায়াতের সাথে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরে আমীর জনাব মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও সিলেট জেলা দক্ষিণের আমীর অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও সিলেট মহানগরীর নায়েবে আমীর মাওলানা সোহেল আহমেদ, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সিলেট জেলার সহ-সভাপতি জনাব পেয়ার উদ্দিন আহমেদ, সিলেট জেলা দক্ষিণের সেক্রেটারি জনাব নজরুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব হাফিজ নাজমুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সিলেট জেলা পূর্বের সভাপতি জনাব মুহিবুল্লাহ, গোলাপগঞ্জ উপজেলা আমীর মাওলানা জমির উদ্দিন, সেক্রেটারি আব্দুল আজিজ জামাল, বাদেপাশা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসরর রেহান উদ্দিন রায়হান, গোলাপগঞ্জ উপজেলার শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্য মাস্টার নুরুল হক, উপজেলা সহকারী সেক্রেটারি এহতেশামুল আলম জাকারিয়া, বাদেপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক জাহিদ হোসাইন, বাদেপাশা ইউনিয়ন সভাপতি জনাব এ এইচ এম ফখর উদ্দিন, সিলেট জেলার বারের আইনজীবি এডভোকেট আজিম উদ্দিন, জনাব আতিকুর রহমানসহ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের জেলা/উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।
উপস্থিত জনতার উদ্দেশে আমীরে জামায়াত বলেন, আমরা এদেশে এমন শাসক চাই, যিনি দিনের বেলা দায়িত্ব পালন করে রাতের বেলায় আরামের ঘুম হারাম করে মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবে, যাতে করে এই জমিনকে আল্লাহ তায়ালা উর্বর করে দেন, দায়িত্বকে সহজ করে দেন। এমন শাসক শুধু জামায়াতে ইসলামীর দরকার নয়, দেশের ১৮ কোটি মানুষেরই দরকার। এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাদের নেতৃবৃন্দকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে, আমাদের ভাইদের গুম করা হয়েছে, খুন করা হয়েছে, অনেককে নির্যাতনের মাধ্যমে চোখ অন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমি কথা দিচ্ছি, এ দায়িত্ব পালনে জামায়াতে ইসলামী কখনো আপনাদেরকে ছেড়ে যাবে না। আমরা যে দেশকে ভালোবাসি, আমরা আমাদের সীমান্তের এক ইঞ্চি মাটি কাউকে ছেড়ে দেবো না। প্রয়োজনে আমরা জীবন দিব। আমরা বলি ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এগুলো আমরা দেখতে চাই না, এগুলো বলাই আমাদের অপরাধ। তাই আগামী দিনে সকল অন্যায়-অত্যাচারের জবাব আমরা ইসলাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দিব ইনশাআল্লাহ।