বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান বলেন, মানুষ মানুষের জন্য এ কথাটি পবিত্র কুরআনের সূরা আল-ইমরানের ১১০ নং আয়াত উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন, “এখন তোমরাই দুনিয়ায় সর্বোত্তম দল। তোমাদের কর্মক্ষেত্রে আনা হয়েছে মানুষের হিদায়াত ও সংস্কার সাধনের জন্য ৷ তোমরা নেকীর হুকুম দিয়ে থাকো, দুষ্কৃতি থেকে বিরত রাখো এবং মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান আনো৷ এই আহলি কিতাবরা ঈমান আনলে তাদের জন্যই ভালো হতো৷ যদিও তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক ঈমানদার পাওয়া যায়, কিন্তু তাদের অধিকাংশই নাফরমান৷ “
তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে সেই উত্তম যে মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়ায়। আমরা কেউ জনগণের দুঃখ-মুসিবত দূর করার সামর্থ্য রাখি না, আমরা শুধু সাহস যোগাতে পারি; সবর করার জন্য পরামর্শ দিতে পারি আর আমাদের তাওফিক অনুযায়ী তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি। কিন্তু মূল বিপদ দূর করবেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন।
তিনি আজ ১৩ জুলাই বুধবার সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে খাদ্য ও বিভিন্ন উপহার সামগ্রী বিতরণকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন।
আমীরে জামায়াত আজ ঈদের ৪র্থ দিনের মতো দিনভর সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ধরাধরপুর এলাকায়, ওসমানীনগর উপজেলার তাজপুর এলাকায় ও বিশ^নাথ উপজেলার দেওকলস ইউনিয়নের সৎপুর এলাকায় বন্যা কবলিত মানুষের সাথে ঈদের কুশল বিনিময় ও তাদের মাঝে খাদ্য এবং বিভিন্ন উপহার সামগ্রী বিতরণ করেন।
এ সময় আমীরে জামায়াতের সাথে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি জনাব এ.এইচ.এম হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর জনাব মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমীর জনাব মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, সিলেট জেলা দক্ষিণের আমীর অধ্যাপক আব্দুল হান্নান, নায়েবে আমীর মাওলানা লোকমান আহমেদ, সিলেট মহানগর সেক্রেটারি জনাব মুহাম্মদ শাহজাহান আলী, সিলেট জেলা দক্ষিণের সেক্রেটারি জনাব নজরুল ইসলাম, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জনাব সাইফুল্লাহ আল হোসাইন, গোলাপগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জনাব হাফিজ নাজমুল ইসলাম প্রমুখ।
পৃথক স্থানে অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ সুরমা উপজেলা জামায়াতের আমীর ও লালাবাজার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জনাব খায়রুল আফিয়ান চৌধুরী, ১নং মোল্লারগাও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব মামুন খান, জামায়াত নেতা জাহেদুর রহমান চৌধুরী, সোলাইমান আলী, উপজেলা সেক্রেটারি মাস্টার বদরুল ইসলাম, ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার নাসিরুদ্দিন, লুৎফুর রহমান ও জাহেদুর রহমানসহ স্থানীয় অন্যান্য বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
আমীরে জামায়াত উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বলেন, শাসন ব্যবস্থা একমাত্র আল্লাহ তা’য়ালার জন্য নির্ধারিত। এটা ঘোষণা দেওয়া সহজ কিন্তু এ পথে টিকে থাকা কঠিন। এটা শাহাদাতের পথ, জেল-জুলুমের পথ, ফাঁসির রশির পথ, এটা জেনে-শুনেই মুমিনদেরকে এ পথে এগিয়ে যেতে হবে। সুতরাং এসব জিনিস সবসময় পাপের শাস্তি হিসেবে আসে না বরং মুমিনের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্যও আসে। কারণ নবীগণের উপরও এমন পরীক্ষা এসেছে।
তিনি আরো বলেন, আল্লাহ তা’য়ালার দরবারে দো’য়া করি, যারা ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে চলে গেছেন মহান আল্লাহ তাদেরকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন। আমিন। সরকারের আরও অনেক দায়িত্ব ছিলো কিন্তু তারা পারলেন না অথবা করলেন না। মানবতার এ দু:সময়ে মানুষের পাশে সামর্থ থাকা সত্বেও যারা দাঁড়াতে পারেননি তাদেরকে এজন্য অবশ্যই মহান আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। আমরা যেহেতু একটা দল চালাই, তাই আমাদেরও কিছু দায় দায়িত্ব রয়েছে। আমরা সরকারি তহবিল থেকে কিছু পাই না, কিন্তু মহান আল্লাহ যে তহবিল আমাদেরকে দান করেছেন সেটার হক্ব আদায় করার জন্যই আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা চাই এদেশে ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা হোক। তাহলেই কেবল সকল মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে, মানুষ সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। আর জামায়াতে ইসলামী সে লক্ষ্যকে সামনে রেখেই কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আশা করবো আপনারা আমাদের পাশে থাকবেন, ইনশাআল্লাহ্।
পরিশেষে আমীরে জামায়াত বলেন, আমরা মানুষকে ভালোবাসি। মানুষকে ভালোবাসা মুখের ব্যাপার না, এটা বুকের ব্যাপার। আলেম-ওলামার ওপর যে দেশে জুলুম হয় সে দেশের শাসক কখনও আল্লাহর সাহায্য পেতে পারে না। আমরা এই লড়াইয়ে কোনো অপশক্তির কাছে মাথানত করবো না এবং কারো সাথে আপোষও করবো না, ইনশাআল্লাহ।