বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশের ১২টি জেলার প্রায় ৪ কোটি মানুষ বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবারের ঈদুল আযহার আনন্দ অনেকটাই ম্লান হয়ে গিয়েছে। এমতাবস্থায় সারাদেশের বিবেকবান মানুষ সহ মজলুম সংগঠন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তাদের সামর্থ্যের আলোকে সর্বাত্মক সহযোগিতা নিয়ে জনগণের পাশে ছুটে গেছে। এই ঈদে মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে পশু কুরবানি করার সুযোগ করে দিয়েছেন। আসলে শুধুমাত্র পশুকে কুরবানি করলেই ঈদুল আজহার প্রকৃত উদ্দেশ্য হাসিল হয় না। মনের পশুত্বকে কুরবানি করাই মূলত ঈদুল আজহার প্রকৃত শিক্ষা। ইবরাহীম (আ)-এর মাধ্যমে সংঘটিত কুরবানির ধারাবাহিকতায় আমরা যেন আমাদের মুসলিম উম্মাহর সঠিক পরিচয়কে চিনতে সক্ষম হই। বাংলাদেশ আজ কঠিন সময় অতিক্রম করছে। বিশেষ করে চরম রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, মানবিক অস্থিরতা ও পাশবিকতা আজ গোটা সমাজ ব্যবস্থাকে বিষিয়ে তুলেছে। অসংখ্য পরিবারে মা-বাবা আজ চরম কষ্টে আছেন। অনেকের প্রিয় সন্তানকে গুম করা হয়েছে, ক্রসফায়ারের নামে অনেককে হত্যা করা হয়েছে, হাজার-হাজার মিথ্যা মামলা দিয়ে মানুষকে হয়রানি করার মতো ন্যাক্কারজনক বিষয় পরিলক্ষিত হয়েছে। সেইসব পরিবারসহ আজ সারা দেশের জনগণের মুক্তির জন্য জামায়াতের নেতা-কর্মীদের বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত ১৬ জুলাই ২০২২ শনিবার ঈদ পুনর্মিলনী ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জননেতা নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম জুম, ফেইসবুক, ইউটিউবে সরাসরি অনুষ্ঠিত এই ঈদুল আযহা পরবর্তী পুনর্মিলনীতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ ও মাওলানা আব্দুল হালিম। আরও বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান, অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে এডভোকেট ড. মো. হেলাল উদ্দিন, মুহা. দেলোয়ার হোসেন, কামাল হোসাইন, অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান। শহীদ ও নির্যাতিত মজলুম পরিবারের সন্তানদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক আমীরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আযম (রহি)-এর সন্তান মামুন আল আযমি, শহীদ আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর সন্তান ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন, সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের সন্তান আলী আহমাদ মাবরুর, শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার সন্তান হাসান জামিল, কারাবন্দী নায়েবে আমীর আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মুফাসসিরে কোরআন আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর সন্তান মাসুদ সাঈদী, কারাবন্দী এটিএম আজহারুল ইসলামের সন্তান সুমন তাসনিম আজহার, এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্যবৃন্দসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানে সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী, মহানগর শিল্পীগোষ্ঠী ও নাট্যদলের শিল্পীবৃন্দ সুস্থ্য ধারার মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা পরিবেশন করে।
ডাঃ শফিকুর রহমান আরও বলেন, পবিত্র ঈদুল আযহায় আমরা পশু জবেহ করার মাধ্যমে ত্যাগ ও কুরবানির নজরানা পেশ করেছি। এর পাশাপাশি গত জুন মাসের ১৬ তারিখ থেকে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সেখানে আমরা আমাদের সাধ্যমত সহযোগিতা করেছি। তবে সেটা কষ্টে থাকা মানুষের জন্য যথেষ্ট নয়। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষ ঘর-বাড়ী, সহায়-সম্পদ, গৃহপালিত পশুসহ সবকিছু হারিয়েছে। সেখানে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের পক্ষ থেকে খাবার প্যাকেট বিতরণসহ নানা কার্যক্রম ও সহযোগিতা সবার চোখে পড়েছে, আলহামদুলিল্লাহ। মহানগরী দক্ষিণের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের এজন্য বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। মানুষের দুর্দিনে আপনারা ছুটে গিয়েছেন, সেবা ও সহযোগিতা করেছেন এটার উত্তম প্রতিদান মহান আল্লাহ নিশ্চয়ই দিবেন ইনশাআল্লাহ। আমরা যেন আল্লাহর নির্ভেজাল ও নিবেদিত গোলাম হতে পারি সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
মাওলানা এটিএম মা’ছুম বলেন, কুরবানির প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে ঈমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মুত্তাকি হতে পারা। আল্লাহর পছন্দের কাছে নিজের সবকিছু উৎসর্গ করতে পারা। প্রকৃত অর্থে সমাজে যে যত বেশি ত্যাগী, তিনি ততবেশি বড় মানব হিতৈষী হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারেন। এখানে একটি প্রতিষ্ঠিত খোদাহীন সমাজ ব্যবস্থাকে মোকাবেলা করে ইসলামী সমাজ বিনির্মানের জন্য আমাদেরকে কুরবানি ও ত্যাগের সর্বোত্তম নাজরানা পেশ করতে হবে।
হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, আমরা যদি আমাদের দাওয়াতকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতে পারি তাহলেই কেবল সংগঠনের প্রকৃত উদ্দেশ্য পূরণ হবে। আমাদের শ্রম, সময়, অর্থ, মেধা সবকিছু সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে এদেশে ইসলামের পতাকা উড্ডিন করার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, কেবল তখনই আমাদের উদ্দেশ্য সফল হবে।
এড. মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ঈমানদার ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে বলেছেন, আমি মানুষকে নানাভাবে পরীক্ষা করবো। কখনো ভয় দিয়ে, কখনো ক্ষুধা দিয়ে, কখনো তার জান-মালের ক্ষতি সাধনের মাধ্যমে। এসব কিছুর মাধ্যমে আল্লাহ যাচাই-বাছাই করে নিতে চান, কে প্রকৃত ধৈর্য্যশীল। নিঃসন্দেহে সেই সব ধৈর্য্যশীলদের জন্য রয়েছে আল্লাহর জান্নাত। এজন্য আমাদেরকে ঈমানের পরীক্ষায় উত্তির্ন হতে হবে।
মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, মুমিনদের বক্তব্য হবে এটাই আল্লাহ ও তার রাসূলের (সা) পক্ষ থেকে যা নির্দেশ করা হয়েছে, তা পালনে সচেষ্ট থাকা। কথা হবে এমন, আমি যা শুনলাম তা মেনে নিলাম। কুরবানির প্রকৃত শিক্ষা হলো আল্লাহর রাস্তায় প্রিয় বস্তুকে উৎসর্গ করা। পিতা ইবরাহীম (আ) এবং পুত্র ইসমাঈল (আ)-এর মত একজন মুসলিম হিসেবে আমাদেরও দৃঢ়তা নিয়ে ত্যাগ ও কুরবানির মানসিকতা লালন করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, কুরবানি ও ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে আগামীতে আমরা যেন সংগঠন পরিচালনায় সামগ্রিকভাবে আরও বেশি তৎপর ভূমিকা রাখতে পারি সে আহবান রাখছি। ঈদুল আযহার প্রকৃত শিক্ষা নিয়ে আজকে আলোচনা হয়েছে। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদেরকে ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে সকল যায়গায় তা বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রকৃত ত্যাগ ও কুরবানির মাধ্যমে ইকামতে দ্বীনের এই কাজকে এগিয়ে নিতে সকল ধরনের বাঁধা অতিক্রম করে আমরা এই ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ সহ সমগ্র বাংলাদেশকে ইসলামী আন্দোলনের উর্বর ভূমি হিসেবে গড়ে তুলবো ইনশাআল্লাহ। তিনি ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে সংযুক্ত সকল সম্মানিত মেহমানবৃন্দসহ সকলকে কৃতজ্ঞতা জানান।