বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, প্রিয় জন্মভূমি আজ ভালো নেই, বাংলাদেশ পথ হারিয়েছে, জনগণকে আবার ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মাধ্যমে সেই হারানো পথ ফিরিয়ে আনতে হবে। ২০০৯ সালে জনগণের চোখ ফাঁকি দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সব প্রতিষ্ঠান একে একে ধ্বংস করে দিয়ে দেশকে একটি তাঁবেদারী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।
তিনি চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপজেলা/থানা দায়িত্বশীলদের শিক্ষাশিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন।
প্রধান অতিথি আরো বলেন, ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন এবং ২০১৮ সালের নিশি রাতে কেন্দ্র দখল করে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে তারা আজ দেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। সরকারের এমপি-মন্ত্রী ও দলীয় নেতাদের সীমাহীন দুর্নীতিতে লাগামহীন দ্রব্যমূল্যসহ জনজীবনের সর্বক্ষেত্রে চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার আবারো আজ্ঞাবহ নতুন নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে নির্বাচনের নামে প্রহসন ও নাটক সাজানোর চেষ্টা করছে। তবে আশার ব্যাপার হলো গত নির্বাচনে যারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দল নিরপেক্ষ সরকার গঠনের কথা বলেননি, এবার তারা বলছেন। কিন্তু শুধু বললেই এ দাবি আদায় হয়ে যাবে না। এজন্য অতীতের মতো কঠিন আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে এবং দল নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করে ছাড়তে হবে। এর পূর্ব শর্ত হলো জাতীয় ঐক্য। এই দাবি আদায়ের আন্দোলন জোটগত হবে না যুগপৎ হবে সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হলো অভিন্ন কর্মসূচি ও চিন্তার ঐক্য থাকতে হবে। চূড়ান্ত পর্যায়ে সবাইকে একদফার আন্দোলনে আসতে হবে। এটা প্রমাণিত যে, দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় না। দেশের জনগণ একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। বর্তমান সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তাদের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো প্রশ্নই আসে না। তাই আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আগামী সংসদ নির্বাচন অবশ্যই কেয়ারটেকার বা দল নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে হতে হবে।
আমীরে জামায়াত আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, কোনো কারণে জাতি যদি এ দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয়, তাহলে যে অন্ধকার আমরা দেখছি, তার চাইতেও আরো ঘোর অন্ধকার দীর্ঘ দিনের জন্য জাতির ঘাড়ে চেপে বসতে পারে। মহান আল্লাহর কাছে এর থেকে আশ্রয় চাই। একটি দায়িত্বশীল জিম্মাদার সংগঠন হিসেবে জামায়াত অতীতে জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এবারো জামায়াতে ইসলামী জাতির এই গুরু দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত, ইনশাআল্লাহ। জাতির সামনে এর কোনো বিকল্প নেই।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও চট্টগ্রাম অঞ্চল পরিচালক উপাধ্যক্ষ আবদুর রবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শিক্ষাশিবিরে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, জামায়াতের জনশক্তিকে আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আত্মাকে পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র করতে হবে। অহংকার, লোকদেখানো ইবাদত, হিংসা, বিদ্বেষ, প্রবৃত্তির বিভিন্ন অবৈধ চাহিদা ইত্যাদি অন্তরের পাপ। যেভাবে শরীয়তের বিধান ঈমানদারকে পালন করতে হয়, তেমনি চিন্তাজগতের পাপ থেকে আমাদের দূরে থাকার চেষ্টা করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম বলেন, মানবসৃষ্টির পর আল্লাহ যে নিয়ামত পাঠিয়েছেন তা হল নবী-রাসূল। তাদের মাধ্যমে আল্লাহ মানুষদের জীবন বিধান শিখিয়েছেন। সেই জীবন বিধান ছিল নির্ভুল পথ নির্দেশনা। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মাধ্যমে পাঠানো জীবনবিধানই সর্বশেষ ও পূর্ণাঙ্গ। একমাত্র রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিষ্ঠিত ইসলামই মানবজীবনের সার্বিক কল্যাণ সাধন করতে পারে। রাসূল (সা.) ও সাহাবিদের আদর্শ মেনেই আমাদের জীবনযাপন করতে হবে। তিনি আরো বলেন, ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্বশীল হিসেবে নিজেদের মান-মর্যাদা জেনে বুঝে আমাদেরকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে হবে এবং দায়িত্ব আমানত হিসেবে নিয়ে নিঃস্বার্থভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল ইসলাম খান মিলন বলেন, জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাস হলো ত্যাগের। আমরা কেউ কিছু পাওয়ার জন্য এ সংগঠনে আসিনি। সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে দ্বীন কায়েমের প্রচেষ্টা আমাদের অব্যহত রাখতে হবে।
কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, আমাদের সংগঠনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হল বাংলাদেশে নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পন্থায় ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। নিয়মতান্ত্রিক পন্থা হল, ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে জনমত গড়ে তোলে তার ভিত্তিতে নেতৃত্ব বা সরকার পরিবর্তন। এ কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনতে হলে প্রতিটি এলাকায় সাংগঠনিক ভিত্তি ও গণভিত্তি মজবুত করতে হবে। এক্ষেত্রে সমাজ সংস্কার ও সামাজিক কার্যক্রম অপরিহার্য। তাই এ সম্পর্কে আমাদের ধারণা অর্জন করতে হবে। ইসলামে সমাজসেবার উদ্দেশ্য মানুষের সন্তুষ্টি নয়, বরং মানুষের কল্যাণ সাধনের মাধ্যমে আখেরাতে নাযাত, পুরষ্কার ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, মানুষদের দ্বীনের পথে অগ্রসর করার জন্য আমাদেরকে কাজ করতে হবে। জান-মালের ভয়কে পেছনে ফেলে ঈমানের শক্তিতে বলিয়ান হতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আব্দুর রব বলেন, থানা দায়িত্বশীল ভাইদেরকে দায়িত্ব পালনে সচেতন হতে হবে। তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনকে মজবুত করতে হবে। জনগণকে সাথে নিয়ে অগণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে।
শিক্ষা শিবিরে আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর মুহাম্মদ শাহজাহান, কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহছানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. সামিউল হক ফারুকী, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও অঞ্চল টিম সদস্য যথাক্রমে অধ্যাপক আহসানুল্লাহ ভুঁইয়া, অধ্যক্ষ আমিরুজ্জামান, জাফর সাদেক ও মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।