আজ ২০ আগস্ট বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যায় সিলেট জেলার সদর, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলার ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ২৪টি ক্বওমী মাদরাসা প্রধানদের হাতে চলমান সমাজকল্যাণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রাণপ্রিয় সংগঠনের পক্ষ থেকে দ্বিতীয় দফায় আর্থিক সহযোগিতা তুলে দেন।
এ সময় আমীরে জামায়াত সিলেট সদর উপজেলার ৫টি, কানাইঘাট উপজেলার ৫টি, কানাইঘাট পৌরসভার ১টি, জৈন্তাপুর উপজেলার ৫টি, গোয়াইনঘাট উপজেলার ৩টি, জকিগঞ্জ উপজেলার ২টি ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ৩টিসহ মোট ২৪টি মাদরাসার প্রধানদের হাতের আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। আমীরে জামায়াত উপস্থিত এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের সম্মানিত প্রধানগণ ও শিক্ষকবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেন এবং তাঁদের সার্বিক খোঁজ-খবর নেন। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের যে ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে দেওয়ার জন্য মহান রাব্বুল ইজ্জতের দরবারে খাছ সাহায্যের জন্য দো’য়া করেন। প্রতিষ্ঠানগুলো উত্তরোত্তর যাতে সমাজে ইলমে দ্বীনের শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে সেজন্যও মহান মনিবের দরবারে বিগলিত চিত্তে দো’য়া করেন।
এ সময় আমীরে জামায়াতের সাথে উপস্থিত ছিলেন অন্যতম কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, সিলেট উত্তর জেলা আমীর হাফেজ মাওলানা আনোয়ার হোসেন খান, নায়েবে আমীর উপাধ্যক্ষ মাওলানা ফয়জুল্লাহ বাহার, সিলেট মহানগরী সেক্রেটারি জনাব শাহজাহান আলী, জেলা উত্তরের সেক্রেটারি ও জৈন্তাপুর উপজেলার একাধিকবার নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন ও সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা ইসলাম উদ্দিনসহ জেলা ও স্থানীয় জামায়াত নেতৃবৃন্দ।
মত বিনিময়কালে আমীরে জামায়াত বলেন, “এবারের বন্যার যে ভয়াবহতা আমি দেখেছি, আমি আমার জীবনে এবং আমার চেয়ে যারা বয়োজ্যেষ্ঠ উনারাও এরকম ভয়াবহতা দেখেননি। এটি একটি জাতিরাষ্ট্র। সংবিধান অনুযায়ী এ রাষ্ট্রের প্রকৃত অভিভাবক হচ্ছে সরকার। এই ভয়াবহতায় জনগণ সরকারের কাছ থেকে অভিভাবকসুলভ আচরণ আশা করে। সকলেই সরকারের কাছে এ আহবান জানিয়েছিলো। কিন্তু সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত না হওয়ার কারণে জনগণের এ কষ্টে সরকারকে তেমন সাড়া দিতে দেখা যায়নি। ক্ষতি এতটাই ব্যাপক যে, এটা কোন ব্যক্তি বা দলের পক্ষে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। কোন সরকারের পক্ষেও সম্ভব নয়। এটি কাটিয়ে উঠতে কেবল আল্লাহ তা’য়ালাই সহায়তা করতে পারেন। তবে সরকারের দায় অবশ্যই রয়েছে।
আমীরে জামায়াত পবিত্র কুরআনের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, “তোমরা ভূ-ভাগে এবং পানিতে যেসব বিপর্যয় দেখো এগুলো তোমাদের দু’হাতের কামানো ফসল।” জামায়াতে ইসলামী একটি মাজলুম সংগঠন। আমাদেরকে চতুর্দিক থেকে চেপে ধরা হয়েছে। আমাদেরকে দেশ এবং জাতির জন্য স্বস্তিতে কোন কাজ করতে দেওয়া হয় না। আমাদেরকে ফাঁসির কাষ্ঠে নিয়ে যাওয়া হয়, খুন করা হয়, গুম করা হয়, আমাদেরকে জেলে ঢুকানো হয়। তারা আমাদের রিজিকের ওপর আঘাত করে, আমাদের যুবকদের দেহ থেকে চোখ তুলে ফেলে, গুলি করে অন্ধ করে দেয়, হাত কাটে, পা কাটে, অঙ্গহানি করে।
তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর উপর যখন আঘাত আসলো, জাতির সামনে তখন বিষয়টা স্পষ্ট হলো না। অপপ্রচারে জাতিকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দেওয়া হলো। মানুষ মনে করলো, এগুলো রাজনৈতিক বিষয়; এগুলো রাজনৈতিক লড়াই। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে শাপলা চত্বর থেকে শুরু করে আস্তে আস্তে সব প্রমাণিত হতে শুরু করলো। এগুলো রাজনৈতিক লড়াই নয়। এ লড়াই হচ্ছে ঈমানী ও দেশপ্রেমিক শক্তির বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদের লড়াই। সুতরাং যারা অন্তরে খালেস ঈমান ধারণ করবেন, ইসলামের পথে মানুষকে আহবান জানাবেন তাদের কাউকেই ছাড় দেবে না । তাই গুলি করে আমাদের বন্ধু আলেম-ওলামাদের হত্যা করা হলো, জেলে ঢোকানো হলো। তাদের কেউ কেউ জেল থেকে মাজলুম হালতে মুক্তিও পেয়েছেন । আবার অনেকে জেলের মধ্যে দুখে-দুখে কষ্ট করছেন।
আমীরে জামায়াত আরো বলেন, যে দেশে আলেম-ওলামারা জেলে থাকেন, অপরাধীরা সমাজে দাপিয়ে বেড়ায়, সেই সমাজের উপর মহান আল্লাহর রহমত আসে না। স্বৈরাচারীরা তো দুনিয়ার সফলতার জন্য এগুলো করবেই। লড়াইটা আমাদের সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করতে হবে। আমরা জুলুমে ভীত সন্ত্রস্ত নই, আমরা হতাশও নই। মুমিন তো শহীদ হতে চায়। এর চেয়ে উত্তম মৃত্যু আর হতে পারে না।”