চা শিল্প বাংলাদেশের বৃহৎ একটি শিল্প, ২০২১ সালে দেশের ১৬৭টি চা বাগান থেকে উৎপাদিত ৩ লাখ ১৩ হাজার কেজি চা বিদেশে রপ্তানি হয়েছে যার বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। এভাবে প্রতি বছর চা রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মূদ্রা আয় হলেও চা-শ্রমিকদের জীবনমান সেই প্রাচীন আমলের মতই রয়ে গেছে।
দেশে অনেক উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ের গালগল্প শোনা গেলেও বহু বছর ধরে চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি সেই ১২০ এর ঘরেই আটকে আছে। এ যেন এক আধুনিক দাসত্ব। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে ১২০ টাকায় একটি সংসারের এক বেলার খাবারও স্বাভাবিকভাবে যোগানো সম্ভব নয়, সেখানে সংসারের অন্যান্য জীবন উপকরণ কেনা, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ যোগানো তো অলীক কল্পনা। ১২০ হলেও অনেক সময় নানা অজুহাতে সেই টাকা থেকেও কেটে নেওয়া হয়।
বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষাক্ষেত্রে তারা নিতান্তই অবহেলিত। এ বিষয়টির দায় সরকারকেই নিতে হবে এবং তার সমাধানও দিতে হবে।
বহু আন্দোলন ও লেখালেখি হলেও দেশের এই প্রান্তিক শ্রমজীবীদের প্রাণের দাবি উপেক্ষিতই থেকে গেছে। ২০২০ সালে চা বাগান মালিকরা শ্রমিকদের মজুরি বাড়িয়ে ৩০০ টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিলেও তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি।
গত ৯ই অগাস্ট থেকে দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে আবারও ধর্মঘট শুরু করেছিলেন চা বাগানগুলোর প্রায় সোয়া লাখ শ্রমিক। চা শ্রমিকদের এ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ১২০ থেকে মাত্র ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকার আশ্বাস দেওয়া হয় শ্রম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। বর্তমান দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এই সামান্য মজুরি বৃদ্ধি শ্রমিকদের বহুদিনের দাবির সাথে এক প্রকার রসিকতা ছাড়া কিছুই নয়।
এরাও তো মানুষ। এদেরও একটা মানবিক মর্যাদা আছে। এ অবস্থায় দেশের অবহেলিত চা-শ্রমিকদের জীবনমানের একটু উন্নয়নের জন্য হলেও তাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে উপযুক্ত মজুরি নির্ধারিত করা হোক। সবকছিুর দাম বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় তাদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে কোনো টালবাহানা করা রীতিমত জুলুম।
আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত হবে, চা-শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে তাদেরকে তাদের কর্মের জায়গায় ফিরিয়ে দিয়ে কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা।