বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান বলেছেন, “বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এদেশের মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করছে। কিন্তু আমরা জানি আমাদের কাজ সহজ নয়। এ পথে অনেক বাঁধা-বিপত্তি ও পরীক্ষা আছে। সে পরীক্ষা এবং জুলুম-নির্যাতনের মধ্যেও ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের মজবুত কদমে এগিয়ে যেতে হবে।”
৩০ আগস্ট, মঙ্গলবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাজশাহী মহানগরীর উদ্যোগে আয়োজিত ভার্চুয়ালী যুক্ত হয়ে এক কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীরে জামায়াত উপরোক্ত কথা বলেন।
রাজশাহী মহানগরীর আমীর ড. কেরামত আলীর সভাপতিত্বে ও মহানগরী সেক্রেটারি জনাব ইমাজ উদ্দিন মন্ডলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও রাজশাহী অঞ্চল পরিচালক অধ্যক্ষ জনাব মুহাম্মদ শাহাবুদ্দিন। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মহানগরী নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ সিদ্দিক হুসাইন, এ্যাড. আবু মোহাম্মদ সেলিম, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাববুবুল আহসান, অধ্যাপক শাহাদাত হোসাইন ও সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক মাজিদুর রহমান প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীরে জামায়াত আরো বলেন, “বাংলাদেশ আজ পরিণত হয়েছে খুন ও গুমের দেশে। আমাদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে। সারাদেশে জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলের শত-শত নেতা-কর্মীদের খুন ও গুম করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসে দেশের আকাশ-বাতাস স্বজন হারানোদের কান্নায় ভারী হয়েছে। মা তার সন্তানের জন্য, স্ত্রী তার স্বামীর জন্য, সন্তান তার বাবার জন্য, বোন তার ভাইয়ের জন্য আহাজারী করছে, আর্তনাদ করছে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান-আল আযমী সেনাবাহিনীর একজন চৌকষ উচ্চপদস্ত কর্মকর্তা ছিলেন। তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হলো, তাকে গুম করা হলো। ব্যারিষ্টার আরমান নিরাপদে থাকার জন্য পৈত্রিক বাড়ী ছেড়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। সেখান থেকেও তাকে গুম করা হলো। আজও আরমানের মা, স্ত্রী ও দুই অবুঝ শিশু কন্যা তার ঘরে ফেরার প্রতিক্ষায় আছেন। বর্তমান শাসক গোষ্ঠি ব্রিটিশ বেনিয়াদের চেয়ে কম নয়। আর আমাদের পথ চলা এর মধ্যে দিয়েই।
আমীরে জামায়াত বলেন, জামায়াতে ইসলামী তার সামর্থের আলোকে দেশে একটি সুন্দর ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আমরা মানুষকে আল্লাহর এক গোলামীর দিকে আহবান জানাচ্ছি। কিন্তু এ কাজ সহজ নয়, এ পথ কন্টকাকীর্ণ। এ পথ তাদের জন্য যারা হজরত খাব্বাব (রা.), হজরত খোবাইব (রা.), হজরত বেলাল (রা,) মত সাহস ও হিম্মত রাখে। এ পথ বিপ্লবীদের, আর মানুষের কল্যানকামীদের, যারা আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে মাথা নত করে না।
কর্মী সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে কেউ ভালো নেই, নিরাপদে নেই। কিন্তু এভাবে চলতে পারে না। আমাদের এ প্রিয় মাতৃভুমি এভাবে ধ্বংস হতে পারে না। এজন্য ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের আজ প্রয়োজন উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি করা এবং জুলুম ও অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের বিজয় সিনিয়ে আনার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করা। যে তরঙ্গে জালিমেরা খড়-কুটোর মতো ভেসে যাবে। আজ বাংলাদেশেও ইসলামের বিজয় সম্ভব, যদি মহান আল্লাহর কাছে আমাদের জান ও মাল সপোর্দ করে বলি, হে আল্লাহ! এগুলো তোমার দান, তোমার সন্তষ্টির জন্য আমরা এগুলো বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত। আমাদের তিনটি কাজ করতে হবে- (১) আল্লাহ তা’য়ালা ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর উপর ঈমান আনা (২) মহান আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা (৩) প্রয়োজনে শাহাদাতের নজীর স্থাপন করা।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুহাম্মদ শাহাবুদ্দিন বলেন, “আমাদের কর্মীদের মনে রাখতে হবে, আমরা মুসলমান মহান আল্লাহর প্রতিনিধি। এ দায়িত্ব পালন করা সকল মুসলমানদের ঈমানী দ্বায়িত্ব। বর্তমানে আমাদের বিরোধীতাকারীরা না বুঝার কারণে, আমাদের উপর জুলুম করছে। আমাদেরকে ধৈর্যের সাথে দাওয়াতি কাজ চালিয়ে যেতে হবে।”