বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, “দ্বীন কায়েমের প্রত্যয়, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা যে অনুভূতি লালন করি তা আল্লাহ তা’য়ালার দান। আর যুগে-যুগে এই অনুভূতি লালন ও পালন করতে গিয়েই অনেকে জন্মভূমি ছেড়ে হিজরত করেছেন, শাহাদাত বরণ করেছেন; আহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অগণিত মানুষ। তাই ইতিহাসের সে ধারাবাহিকতায় ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের সকল বাধা-প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে আরো বেগবান কারার জন্য সকলকে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তোলার আহবান জানান।”
তিনি আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত নবনির্বাচিত মহানগরী আমীরের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। আজ সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত মহানগরী উত্তরের মজলিসে শুরার বিশেষ অধিবেশনে অঞ্চল পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুমের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান নির্বাচিত মহানগরী আমীরকে শপথ বাক্য পাঠ করান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জনাব নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর জনাব আব্দুর রহমান মুসা, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম প্রমূখ। উল্লেখ্য, রুকনদের গোপন ভোটে ২০২৩-২০২৪ কার্যকালের জন্য ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর নির্বাচিত হয়েছেন জনাব মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “ইসলামী আন্দোলনের ওপর জুলুম-নির্যাতন ইতিহাসের ধারাবাহিকতা। সে জুলুমের শিকার হয়েই বিশ্বইসলামী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, ভাষা সৈনিক, জাতির রাহবার অধ্যাপক গোলাম আযমকে মিথ্যা অভিযোগে কারারুদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। একই সাথে শহীদ সাবেক আমীরে জামায়াত ও সাবেক মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক সেক্রেটারি জেনালের ও সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সাবেক সহকারি সেক্রেটারি জেলারেল শহীদ মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা এবং সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য শহীদ মীর কাসেম আলীকে ন্যায়ভ্রষ্ট রায়ের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে। এমনকি বিশ্ববরেণ্য আলেমে দ্বীন মাওলানা একেএম ইউসুফ ও মাওলানা আব্দুস সোবহানকে বিনা চিকিৎসায় কারাগারে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। একই সাথে ইসলামী আন্দোলনের আরও অনেক নেত-কর্মীরাও নানাবিধ জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং অনেকে শাহাদতও বরণ করেছেন। তিনি শহীদদের রেখে যাওয়া আমানত রক্ষায় সকলকে ময়দানে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য আহবান জানান।
আমীরে জামায়াত বলেন, দায়িত্ব কেউ চেয়ে নেয় না। চেয়ে নিলে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে লা’নত আসে। দায়িত্ব যদি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে, তখন আল্লাহ তা’য়ালা তার ওপর রহমত নাযিল করেন। তিনি নতুন করে শপথ গ্রহণ করা আমীরের সুস্থতা ও দায়িত্ব পালনে সাফল্য কামনা করে বলেন, ‘মহান আল্লাহ তা’য়ালা তাকে সুস্থ থেকে সততা, যোগ্যতা ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনের তাওফিক দান করুন। তিনি তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন যারা তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন এবং ভোটাররাও তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন’। তিনি নতুন আমীরের দায়িত্ব পালনের সার্বিক সাফল্য কামনায় মহান আল্লাহর দরবারে দো’য়া করেন।
তিনি বলেন, দেশ ও জাতির ঘাড়ে এক স্বৈরাচারি ও কর্তৃত্ববাদী শাসনের জগদ্দল পাথর চেপে বসেছে। জনগণ এই অপশাসন-দুঃশাসন থেকে মুক্তি চায়। আর স্বাভাবিক নিয়মেই এই কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটবে-ইনশাআল্লাহ। সরকার ইচ্ছা করলেই তাদের এই দুঃশাসন অব্যাহত রাখতে পারবে না। এজন্য জনগণকে সাথে নিয়ে আমাদের সকলকে রাজপথে নেমে আসতে হবে। আর এ আন্দোলন কোন হঠকারী আন্দোলন হবে না বরং নিয়মতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে অপশাসন-দুঃশাসনের অবসান ঘটানো হবে, ইনশাআল্লাহ। আমীরে জামায়াত সরকারকে আত্মসমালোচনার পরামর্শ দিয়ে বলেন, মানুষ মাত্রই ভুল হয়; আমরাও ভুল-ত্রুটির উর্দ্ধে নই। তাই সরকারকে অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশ ও জাতির কোন ক্ষতি না করে শান্তিপূর্ণভাবেই ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হবে। বল প্রয়োগের চেষ্টা করলে তা তাদের জন্য মোটেই সুখকর হবে না; জনগণ অনেক ক্ষতির সম্মূখীন হবে।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা এটিএম মা’ছুম বলেন, “আল্লাহ তা’য়ালা আম্বিয়া কেরামের উপর দায়িত্ব দিয়ে দুনিয়ায় পাঠিয়েছিলেন, একই দায়িত্ব সাহাবায়ে কেরামের ওপরও ছিলো। দায়িত্ব হলো আমানত। এ দায়িত্বের জন্য মহান আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতা করতে হবে। এর জন্য কেউ লাঞ্চিত হবে, কেউবা মর্যাপূর্ণ হবে। শহীদদের রেখে যাওয়া আমানত রক্ষায় দায়িত্বশীলদের আরো বেশি তৎপর হতে হবে।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জনাব নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, “অতীতের চাইতে ২০২৩-২০২৪ হবে চ্যালেঞ্জিং। যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবো ইনশাআল্লাহ।”
সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, “কোনো বিবেচনায় আমি এ দায়িত্ব পালনে নিজেকে যোগ্য মনে করিনা। আপনাদের দেয়া আমানত রক্ষায় আমি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবো। আমার জন্য সবাই দে’ায়া করবেন, সার্বিক কাজে পরামর্শ ও সহযোগিতা করবেন।
তিনি বলেন, বিগত ১২ বছরে আওয়ামীলীগ দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। এর থেকে উত্তরণে রাজধানীর জনশক্তিদেরকে, ওয়ার্ড-ইউনিটকে মজবুত করে আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। আগামী দিনে নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রাজধানীবাসী যথাযথ ভূমিকা রাখবে, ইনশাআল্লাহ।”