বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশের সবুজ জমিনে কুরআনকে বিজয়ী করতে সকল স্তরে শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত্তি রচনা করতে হবে। আমাদের সংগঠনের চলার পথটি মোটেই সহজ ছিলো না। জন্মলগ্ন থেকেই বিভিন্ন কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী আমাদের অগ্রযাত্রাকে বারবার আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। আমাদের সামনে হাজারো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলো। আলহামদুলিল্লাহ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তার ঐতিহাসিক দীর্ঘ পথচলায় নানাবিধ বাঁধা অতিক্রম করে সম্মুখে এগিয়ে চলেছে। দেশের মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছে। সকল ষড়যন্ত্র, প্রপাগান্ডা ও অপপ্রচারেও আমাদের অগ্রযাত্রাকে আটকাতে না পেরে অন্যায়ভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে ব্যবহার করে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ অসংখ্য নেতাকর্মীদের হত্যা করে আমাদের ধ্বংসের অপতৎপরতা চালানো হয়েছে। আল্লাহ তায়া’লার মেহেরবানীতে সকল সামাজিক অপরাধ, চাঁদাবাজিসহ ক্ষুদ্র যেকোন শাস্তিযোগ্য অপরাধ থেকেও আমাদের সহকর্মীরা মুক্ত। আমাদের উদ্দেশ্য একটাই, মহান আল্লাহর দেওয়া কুরআনের বিধান অনুযায়ী একটি ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। এজন্য জামায়াতে ইসলামী তার সকল প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে।”
আজ ১৫ মার্চ জুমাবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে থানা মজলিসে শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্যদের নিয়ে আয়োজিত শিক্ষা শিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মুহা. দেলাওয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় শিক্ষা শিবিরে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি কামাল হোসাইন ও ড. আব্দুল মান্নানসহ মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্যবৃন্দ ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা শপথের কর্মী, আল্লাহ তায়া’লার গোলামী করার জন্য আমরা আত্ম-নিবেদিত। এজন্য কুরআনের বিধানের আলোকে নিজেকে তৈরী করে দেশ, সমাজ ও জাতি গঠনে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো। যারা সবসময় আমাদের বিরোধীতা করছেন, আমরা তাদেরকে আমাদের বন্ধু, ভাই-বোনের ন্যায় মনে করি। তাদের হেদায়াতের জন্য আমরা মহান রবের নিকট দোয়া অব্যাহত রাখবো। আমাদের মাঝে মাহে রমাদান মাস অতিবাহিত হচ্ছে। আসুন আমরা এই মাসের পবিত্রতা রক্ষা করি। নিজেদের পরিশুদ্ধ করার জন্য ইবাদাত বন্দেগীতে আরও বেশি মনোযোগী হই এবং মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়ার প্রচেষ্টা চালাই।
তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশের ৯৫ ভাগ মানুষ মুসলমান অথচ এই সমাজকে তাঁর আকিদা বিশ্বাসের জায়গা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য সীমাহীন ষড়যন্ত্র চলছে। একজন মুসলমানের পারিবারিক জীবন, সমাজের সাথে তার ব্যবহার, মানুষের কল্যাণের জন্য সে কি ভূমিকা রাখবে বা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহপাক মুসলিম হিসেবে তাঁকে যে দায়িত্ব বা কাজের নির্দেশনা দিয়েছেন সবকিছু ভুলিয়ে রাখার জন্য গভীর ষড়যন্ত্র বিদ্যমান। এই সকল ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করেই আমদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। এজন্য জামায়াতে ইসলামীর সর্বস্তরের দায়িত্বশীলদের সজাগ ও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।”
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াত সারাদেশে জামায়াতের রোল মডেল হিসেবে আজ সুপরিচিত। এই মহানগরী থেকেই একামাতে দ্বীনের বিজয় পতাকা উড্ডিন হবে ইনশাআল্লাহ। আমাদের মাঝে রহমত, বরকত, নাজাতের সওগাত নিয়ে মাহে রমাদান উপস্থিত। এ মাসে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদাতে বেশি বেশি আত্মনিয়োগ করতে হবে। এভাবেই আমরা আল্লাহ তায়া’লার করুণা পেতে পারি। আর আল্লাহ তায়া’লা আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গেলেই কেবলমাত্র আমাদের প্রকৃত সফলতা নিশ্চিত হবে।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, “সমগ্র বিশ্বের মালিক মহান আল্লাহ তা’য়ালা। আসমান জমিনের সমগ্র কর্তৃত্ব ও রাজত্ব্য একমাত্র তাঁরই। সেই মহান রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি পাওয়ার জন্যই আমাদের সকল কাজ আঞ্জাম দিতে হবে। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের প্রতিটি ফ্লাট বাসা হবে আমাদের এক একটি কার্যালয়। সেই লক্ষ্য পূরণে থানার মজলিসে শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্য দায়িত্বশীল ভাইদেরকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।”
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, “জামায়াতের একজন দায়িত্বশীল হিসেবে দায়িত্বের দাবী যথাযথভাবে উপলব্ধি করে ময়দানে তৎপর থাকতে হবে। সংগঠনের থানা ও ওয়ার্ডের মূল দায়িত্বশীল হিসেবে আমাদেরকে সংগঠন নির্ধারিত সকল কর্মসূচি পরিকল্পিতভাবে বাস্তবায়ন করার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। সংগঠনের প্রতিটি কর্মীকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করে দুনিয়ার পরিবর্তন সাধন করার যোগ্যতা সম্পন্ন জনশক্তিতে পরিনত করতে হবে। পাশাপাশি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যেই আমাদের যাবতীয় কর্মতৎপরতা বজায় রাখতে হবে। এদেশে কুরআনের আলোকে একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের জন্য উপস্থিত দায়িত্বশীলদের বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে।” তিনি দায়িত্বশীল ভাইদের সকল বিভ্রান্তির মোকাবেলায় একটি ভারসাম্যপূর্ণ পন্থা অবলম্বন করে কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য উদাত্ব আহবান জানান।