বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “যারা সত্যিকার অর্থে দেশকে ভালোবাসেন, যাদের প্রত্যাশা এদেশে সুশাসন, ভোটাধিকার, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক তারা সকলেই আজ ঐক্যবদ্ধ। তাই স্বাধীনতার সুফল জনগণের হাতে না পৌঁছা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে এবং চলবে ইনশাআল্লাহ।”
তিনি আজ মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) দুপুর ২টায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগরী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুর রব, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরী নায়েবে আমীর ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও মহানগরী নায়েবে আমীর মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ উল্লাহ, এফ এম ইউনুস, মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী ও শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরী সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান প্রমূখ।”
আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশ আমাদের প্রিয় জন্মভূমি। আল্লাহ তায়া’লা মেহেরবানি করে আমাদের এত সুন্দর দেশে আমাদের সৃষ্টি করেছেন। একসময় বাংলাদেশ মুসলমানদের শাসিত ভারতের অংশ ছিল। পরবর্তীতে মুসলিম শাসন তার গতি ও অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলে। ব্রিটিশেদের অধীনে এই অঞ্চল চলে যায়। ১৯০ বছর পরে আবারও জাতি মুক্তি পায়। ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের পরে যে সামরিক শাসক ছিলেন তার সিদ্ধান্তের ভুলের কারণে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দেয়। পাকিস্তানি শাসকদের হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে গোটা বাঙালি জাতি ফুঁসে ওঠে। যার ফলশ্রুতিতে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়েছিল। যাদের নেতৃত্বে স্বাধীন হয়েছিল তারা জাতিকে ওয়াদা দিয়েছিলেন তারা আইনের শাসন দেশে কায়েম করবেন। কার্যত তার কোনোটাই হয়নি।”
তিনি বলেন, “সরকার নেতৃত্বশূন্য দেশকে করদরাজ্য বানানোর জন্যই ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধকে বিশেষভাবে টার্গেট করেছে। আর সে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই তারা দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে নাস্তিক বানানোর কারখানা বানানোর গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে দিয়ে কথিত নির্বাচনের নামে চর দখলের মহড়া শুরু করেছে।
আওয়ামী সরকার তাদের লুটপাট ও দুর্নীতির প্রধান বাঁধা মনে করে জামায়াতকে। তাই তারা নানান কৌশলে জুলুম নিপীড়ন চালিয়ে জামায়াতের অগ্রযাত্রাকে বন্ধ করে দিতে চাইছে। কিন্তু তাদের অব্যাহত ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে জামায়াত দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে রাজপথে টিকে আছে এবং ভব্যিষতেও থাকবে ইনশাআল্লাহ। এদেশে ইসলামের প্রতিনিধিত্বকারী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী দেশি-বিদেশি বিভিন্ন চক্রান্তে উত্তীর্ণ হয়েছে। মহান আল্লাহর উপরে তাওয়াক্কুল করে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এই অবৈধ আওয়ামী স্বৈরাচারকে মোকাবিলা করতে হবে।”
আমীরে জামায়াত বলেন, “বিভিন্ন দেশে মুসলমানেরা এ ধরনের জুলুমের শিকার কেবলমাত্র অমুসলিমদের দ্বারাই হচ্ছে না বরং পৃথিবীর অনেক মুসলিম দেশে কিছু মুসলিম নামধারী শাসকের হাতেও চরম নির্যাতনের শিকার হচ্ছে অনেক সত্যপন্থী মানুষ। এ সকল দৃশ্যপটকে সামনে রেখে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলন। পূর্বসূরীদের দেখানো পথ ও পদ্ধতি অনুযায়ী বর্তমান ইসলাম বিরোধী ক্ষমতাসীন আওয়ামী শক্তি বাংলাদেশের ইসলাম পন্থীদের উত্থান ঠেকানোর জন্য নতুন নতুন এজেন্ডা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। ৯০ ভাগ মুসলমানদের দেশে তৌহিদী জনতার ঈমান আকিদার সাথে সম্পৃক্ত ইসলামী দলগুলোর অগ্রযাত্রা তারা কোনভাবেই সহ্য করতে পারছে না।”
মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, “জেল-জুলুম, মামলা-হামলা, নির্যাতন ও হত্যার ভয় দেখিয়ে জামায়াতকে দমিয়ে রাখা যাবে না। এখন সময় এসেছে, জান-মালের কোরবানির বিনিময়ে হলেও জুলুমবাজ সরকারের সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বিজয়ী হতে হবে।”
প্রফেসর ড. আব্দুর রব বলেন, “আমরা সারা পৃথিবীর মুসলমানদের দিকে যদি তাকাই তাহলে হাজারো মিল খুঁজে পাই। হয়তো আমাদের কোনো কোনো ব্যাপারে অমিল থাকতেই পারে; কিন্তু আমরা মিলগুলো খুঁজে বেড়াই না। মিলগুলো আমাদের চোখে পড়ে না। আমরা শুধু অমিলগুলো দেখতে পাই। তার খুঁত খুঁজে বেড়াই এবং প্রচার করে বেড়াই। অনৈক্যই মুসলমাদের চরম দুর্দশা, চরম জুলুম-নির্যাতনের কারণ, অমুসলিমরাও চায় এবং চেষ্টা করে মুসলমানদের মধ্যে সবসময় অনৈক্য থাকুক। তারা নির্বিঘ্নে তাদের মতলব হাসিল করে চলে যাক। তাই তো দেখা যায়, কোনো কোনো অমুসলিম রাষ্ট্রের সাথে তাদের কত দহরম-মহরম।”
সভাপতির বক্তব্যে মহানগরী আমীর শাহজাহান চৌধুরী বলেন, “স্বাধীনতার ৫৩ বছর অতিবাহিত হয়েছে। প্রায় ৫০ কোটি বাংলা ভাষাভাষী মানুষ বসবাস করে। উপমহাদেশে বাংলার পরিধি ছিল বিস্তৃত। দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, মাত্র ২০ কোটি মানুষ নিয়ে আমরা ৫৪ হাজার বর্গমাইলে বসবাস করছি। অথচ নবাব সিরাজুদ্দৌলার বাংলার বিহার থেকে শুরু করে আরাকানের সীমান্ত পর্যন্ত বিশাল সাম্রাজ্য নিয়েই বাংলা গঠিত। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি মাত্র সংগঠন যাদের গঠনতন্ত্রে স্পষ্ট করে বলা রয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা, রক্ষাকবচ হিসেবে বদ্ধপরিকর থাকব। এরপরও জামায়াতে ইসলামীকে বিভিন্ন প্রশ্নে জর্জরিত করা হয়। ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ রাজনৈতিক সমাধানের দিকে না গিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের দিকে আমাদের ঠেলে দিয়েছিল ইতিহাসে তা এখানো অস্পষ্ট রয়ে গেছে। এইসব প্রশ্নের জবাব বাংলার মানুষের জানা দরকার।”