বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশ জাতি আজ গভীর সংকটে। ৫৬ হাজারের বর্গমাইলের পুরো বাংলাদেশ আজ বৃহৎ কারাগার। তবুও জেল নামক কারাগারে মানুষের থাকার একটা নির্দিষ্ট জায়গা থাকে। কিন্তু বিরোধী মতের মানুষের জন্য সেই জায়গাটুকুও অবশিষ্ট নেই। গত ১৫ বছরে আমাকে ২৫০ থেকে ৩০০ জায়গায় রাত্রীযাপন করতে হয়েছে। এমন পরিস্থিতি শুধু আমার নয়, দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের। দেশে লুটপাট-দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। শুধু বাজার নয়, গোটা দেশ আজ সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। এভাবে কোন দেশ চলতে পারেনা। এ থেকে জাতিকে মুক্ত করতে দেশপ্রেমিক জনতার ইস্পাত কঠিন ঐক্যের বিকল্প নেই।”
তিনি আজ ২৯ মার্চ জুমাবার সিলেট মহানগরী জামায়াতের উদ্যোগে সাংবাদিক, পেশাজীবি, বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ ও রাজনীতিবিদদের সম্মানে অনুষ্ঠিত মাহে রমাদানের তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরীর আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মোহাম্মদ শাহজাহান আলীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত ইফতার মাহফিলে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “৭ জানুয়ারি দেশে কোন নির্বাচন হয়নি। ভোটের নামে নিজ দল সহ বিভিন্ন দলের কিছু প্রার্থীকে তুলে এনে নির্বাচন করতে বাধ্য করা হয়েছে। কাউকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। কাউকে ছুড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে। বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম রেশনের মাধ্যমে বিরোধী দল গঠন করা হয়েছে। এটা আমাদের কথা নয়, সেই বিরোধী দলের নেতাদের কথা। নির্বাচনের নামে এমন প্রহসন চালিয়ে দেশের হাজার কোটি টাকা নষ্ট করার কোন দরকার নেই। কিছু মানুষকে নির্দিষ্ট করে তারা সরকার পরিচালনা করবে এমন ঘোষণা দিলেই চলে। তারা দেশের ভোট ব্যবস্থাকে একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছে। নতুন প্রজন্ম তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছেনা। তারা ২০১৪ সালে বিনাভোটে সরকার গঠন করেছে। ২০১৮ সালে মধ্য রাতের ভোটে এবং ২০২৪ সালে ভাগাভাগির নির্বাচন করেছে।
ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীর পথচলা নির্ধারণ করতে হবে। ক্ষুদ্র স্বার্থ পরিহার করে দেশপ্রেমিক জনতা ও দলের মধ্যে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। সর্বোপরি সত্যিকারের মুক্তির জন্য কুরআনের সমাজ বিনির্মাণের বিকল্প নেই। সকল জুলুম-নিপীড়ন উপেক্ষা করে আমাদের পথচলা অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।”
তিনি বলেন, “মাহে রমাদান হচ্ছে মানবতার মুক্তির সনদ মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাযিলের মাস। এই মাসে নিজেদেরকে পরিপূর্ণ মুত্তাকী হিসেবে গড়ে তোলার শপথ নিতে হবে। এই মাসে কুরআন হাদীসের আলোকে জীবন পরিচালনার পাশাপাশি ইনসাফভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে সবাইকে কাজ করতে হবে। কুরআনের বিজয়ের মাস মাহে রমাদানের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে ঐক্য অটুট রেখে এদেশে ইসলামী জাগরন তৈরীর সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে।”
এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, “দেশ ও জাতি চরম ক্রান্তিকাল অতিবাহিত করছে। জাতির ঘাড়ে জগদ্দল পাথরের ন্যায় চেপে বসা স্বৈরাচারী সরকারের হাত থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হবে। রমাদানের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে সমাজের সকল স্তরে ন্যায় ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার শপথ নিতে হবে।”
মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, “রক্ত নদী পেরিয়ে, মৃত্যুর পথ মাড়িয়ে শাহাদাতের নজরানা পেশ করে জামায়াত বাংলার জমিনে কুরআনের সমাজ বিনির্মাণে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। দেশ আজ গভীর সংকটে। এ থেকে মুক্তির জন্য দ্বিধাবিভক্ত জাতিকে জামায়াতের পতাকাতলে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। রমজান হচ্ছে বদরের মাস, কদরের মাস। এই মাসে ইনসাফভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের শপথ নিতে হবে। নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার শপথ নিতে হবে। বাংলার জমিনকে কুরআনের রঙ্গে রঙ্গিন না করা পর্যন্ত আমাদের পথচলা থামিয়ে দেয়ার সাধ্য কারো নেই।”
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক ফজলুর রহমান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ভাষা সৈনিক অধ্যক্ষ মাসউদ খান, শিক্ষাবিদ লে. কর্ণেল (অব.) সৈয়দ আলী আহমদ, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুকতাবিস উন নূর, সিলেট জেলা দক্ষিণ জামায়াতের আমীর অধ্যাপক আব্দুল হান্নান, জেলা উত্তরের আমীর হাফিজ আনোয়ার হোসাইন খান, সিলেট চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি খন্দকার শিপার আহমদ ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সিলেট মহানগর সভাপতি শরীফ মাহমুদ।