বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা.শফিকুর রহমান বলেছেন, “দায়িত্বশীলদের কুরআনের জ্ঞানে সমৃদ্ধ হতে হবে। জনশক্তিরা দায়িত্বশীলদের কাছেই কুরআনি সমাধান খুঁজতে আসবে। চূড়ান্ত সফলতা সেই সাহসীরাই পায়, যারা এক আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। দাওয়াতী ময়দানে সকল নেতৃবৃন্দকে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।”
তিনি আজ ১৯ এপ্রিল’২৪ জুমা’বার ‘গণসংযোগ ও দাওয়াতী পক্ষ’ উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরী আয়োজিত সর্বস্তরের দায়িত্বশীল সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর ও সাবেক এমপি জনাব শাহজাহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও মোমেনশাহী অঞ্চল পরিচালক ড. ছামিউল হক ফারকী।
আমীরে জামায়াত ডা.শফিকুর রহমান বলেন, “সকল দায়িত্বশীলকে উঁচুমানের আমল আখলাকের অধিকারী হতে হবে। নিজেদেরকে কুরআন সুন্নাহর আলোকে সাজাতে হবে। দাওয়াতী ময়দানে কাজের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। আমাদের সর্বপ্রথম নিজেকে দাওয়াত দিতে হবে। নিজেকে দ্বীনের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। এরপর পরিবারকে দাওয়াত দিতে হবে। পরিবারের কোনো সদস্যই যেন দাওয়াতের বাইরে না থাকে। আত্মীয়-স্বজন,পাড়া-প্রতিবেশিদের হকের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। পেশাগত জীবনে সম্পৃক্ত যারা আছেন তাদেরকে দাওয়াতের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।”
তিনি বলেন, “আল্লাহ তায়া’লার উপর ভরসা করে এখন থেকে সাংগঠনিক সকল কর্মসূচিতে সক্রিয় ভূমিকা পালনের চেষ্টা করতে হবে। মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইব, তিনি যেন আমাদের পথচলাকে স্বস্তিদায়ক ও সহজ করে দেন। সকল দিক বিবেচনায় জনশক্তিকে অধিক পরিশ্রমী, শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আমাদেরকে মূল উদ্দেশ্যের দিকে ফিরে যেতে হবে।
আজ জুমা’বার থেকে শুরু করে আগামী ১৫দিন গণসংযোগ ও দাওয়াতী পক্ষ পালন করা হবে। এটাকে আমরা বিশেষ অভিযান হিসেবে পালন করব। সারাবছরই আমাদের দাওয়াত চলে। কেন্দ্রীয় আমীর থেকে শুরু করে সকল স্তরের দায়িত্বশীলকে এই কাজে অংশগ্রহণ করতে হবে। সংগঠনের সকল স্তরের দায়িত্বশীলদেরকে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আদর্শিক পথচলা কখনোই সহজ কাজ ছিল না। কিন্তু দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতার জন্য এ পথের বিকল্প নেই। সুতরাং সর্বাবস্থায় আদর্শের ওপর টিকে থাকতে হবে। আমাদের লক্ষ্য ও কর্মপন্থা সুস্পষ্ট। কুরআন প্রদত্ত ও রাসূল (সা.) প্রদর্শিত জীবনব্যবস্থাকে সার্বিক জীবনে গ্রহণ করে এগিয়ে চলাই আমাদের মূল বিষয়।
চট্টগ্রাম মহানগরী শুধু বাণিজ্যিক রাজধানীর দিক থেকে নয়, এটি ইসলামের সূতিকাগার। চট্টগ্রাম দিয়েই আল্লাহর দ্বীনের দ্বায়ীরা এদেশে প্রবেশ করেছিল। তারা কেউই বাংলা ভাষাভাষী ছিলেন না। তাদের চেহারা ভাষা দুটোই ছিল আমাদের থেকে ভিন্ন। কিন্তু তাদের ভাষা বুঝতে এদেশের মজলুম জনগণের কোন অসুবিধা হয়নি। মানুষ তাদের মুখের ভাষা না বুঝলেও তাদের বুকের এবং আমলের ভাষা বুঝতে পেরেছিল। আমলের সৌন্দর্যে অভিভূত হয়েই তারা আল্লাহর দ্বীনকে কবুল করেছিল।”
মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, “সামাজিক অবক্ষয়ের হাত থেকে মুক্ত হয়ে শান্তিময় সমাজ গঠন করতে হলে রাসূলুল্লাহ সা. এর আদর্শের দিকে অবশ্যই ফিরে আসতে হবে। আর এই মহান আদর্শের চর্চা ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে বাস্তবায়নের উত্তম সময় হলো মাহে রমজান। আমরা যদি মাহে রমজানের শিক্ষাকে সার্বিক জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে অল্প সময়ের ব্যবধানে সামাজিক অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব হবে।”
তিনি বলেন, “ইসলামী সভ্যতার অন্যতম কাজ হল আল্লাহর দিকে ডাকা। দ্বীনের দিকে ডাকা হচ্ছে ইসলামের অন্যতম সুন্দর কাজ। স্বয়ং আল্লাহ হচ্ছেন সবচেয়ে বড় দ্বায়ী। তাওহীদ, রেসালাত ও আখিরাতের বীজ মানুষের মনে প্রতিষ্ঠা করাই হল দাওয়াত। প্রতিটি ঘরে ঘরে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে। সকল জনশক্তিকে দাওয়াতী কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসার পাশাপাশি ব্যক্তিগত টার্গেট ভিত্তিক দাওয়াতী কাজকে গুরুত্ব দিতে হবে। বিভ্রান্ত মানুষকে দ্বীনের আলো পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা ইখলাসের সাথে চালিয়ে যেতে হবে।”
ড. ছামিউল হক ফারুকী বলেন, “দাওয়াতী কাজ সহজ কাজ নয়। দাওয়াত হল যুদ্ধ ক্ষেত্র। এখানে যে যত বেশি কৌশলী হবেন, তিনি তত সফলকাম হবেন। রাষ্ট্র, সমাজ,পরিবার এবং নিজের নফস এর পক্ষ থেকে দাওয়াতী কাজে বাধা আসবে। জীবন, স্বাস্থ্য ও সম্পদ ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কখনো কখনো অপ্রাপ্তি কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না পাওয়া অধৈর্যের কারণ হতে পারে। সুতরাং আগামী দিনে ইসলামী আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করতে হলে মানুষের মেজাজ বুঝে দাওয়াতী কাজ করতে হবে এবং বুদ্ধিভিত্তিক ভূমিকা পালন করতে হবে।”
সভাপতির বক্তব্যে মহানগরী আমীর শাহজাহান চৌধুরী বলেন, “যেকোনো আদর্শ প্রতিষ্ঠা করার জন্যে দাওয়াত দেয়া অপরিহার্য। সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরামগণ আল্লাহর দিকে মানবজাতিকে আহ্বান করেছেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আল্লাহর দিকে আহ্বানের জন্য দাওয়াতী কাজ করে এসেছে। আমাদের দাওয়াত মুসলমানদের জীবন গঠন ও ইসলামী আন্দোলনের দাওয়াত। বর্তমান পরিস্থিতিতে সকলকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি বলেন চট্টগ্রামের ময়দান ইসলামী আন্দোলনের জন্য খুবই উর্বর। কাজেই এই নগরীতে তৃণমূল পর্যায়ে আমাদেরকে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছাতে হবে।”
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগরী নায়েবে আমীর ড.আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ ও মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ উল্লাহ। দারসূল কুরআন পেশ করেন বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ প্রফেসর ড. আবু বকর রফিক আহমেদ।