বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, “জুলাই আগস্টের শহীদদের স্বপ্নের দুর্নীতিমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চায় জামায়াত। ২০০৬ সালের মাস্টার মাইন্ডদের তাণ্ডবে এ দেশ পথ হারিয়েছিল। মানুষরূপী বর্বর পশুদের জন্য সেদিনের হত্যাকাণ্ড ছিল স্বাভাবিক। তরুণ ও পথহারা জাতি ২০০৬ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত লড়াই করে জাতিকে মুক্ত করেছে।কোনো শাসক নিজেকে দেশের মালিক মনে করলে তারা জালিম হন।”
তিনি আজ ২৭ অক্টোবর রোববার সকাল ১০ টায় রাজধানীর বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ঢাকা মহানগরী উত্তরের উদ্যোগে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত শহীদ পরিবারের সদস্য এবং আহতদের সাথে মতবিনিময় বিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন এর সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম এর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মু. তাহের, অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল যথাক্রমে- মাওলানা এটিএম মা’ছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, এ.এইচ.এম হামিদুর রহমান আযাদ ও মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য যথাক্রমে সাইফুল আলম খান মিলন, মোঃ আব্দুর রব, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মোঃ নূরুল ইসলাম বুলবুল ও মোঃ মোবারক হোসাইনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
ডা. শফিকুর রহমান ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “শহীদ পরিবারের সদস্যদের যোগ্যতা অনুসারে অন্তত একজনকে চাকরি দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছেন তাদেরকে চাকরিতে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ফ্যাসিবাদ বিরোধীদলগুলোকে এসব পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান তিনি।
ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মু. তাহের বলেন, “২৮ অক্টোবর ছিল ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার প্রথম মহড়া। আমাদের ছেলেরা রক্ত দিয়েছে জীবন দিয়েছে, তবুও পরাজয় মেনে নেয়নি। ৫ আগস্ট যে পরিবর্তন হয়েছে, এটিকে কাজে লাগিয়ে আমরা আমাদের লক্ষে পৌঁছাবো।”
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “শহীদরা মরে না বরং তারা সবসময় জীবিত। আমাদের আগস্ট বিপ্লবের শহীদদের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণক্ষরে লেখা থাকবে। তারা দুনিয়া ও আখেরাতে পুরস্কৃত হবেন।” তিনি পতিত ফ্যাসিবাদের ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান।”
অন্যান্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজার রহমান ইরান, এলডিপি মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমদ, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন, জাগপা মুখপাত্র ও সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, ১২ দলীয় জোটের আহ্বায়ক ও সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার, এনপিপি সভাপতি এডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, খেলাফত মজলিশের মহাসচিব ড. আহমাদ আব্দুল কাদের প্রমুখ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। এটি জনতার দাবি। গণহত্যা করার পর আওয়ামী লীগ আবার রাজনীতি করার অধিকার রাখে কিনা সেটি জনগণের আদালতে ফয়সালা হবে। জনগণ ও আদালত সিদ্ধান্ত নেবে গণহত্যাকারী দল রাজনীতি করতে পারবে কি না। সাংবিধানিক সংকট তৈরির চেষ্টা চলছে। যাতে কোনো রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক সংকট না হয় এবং ফ্যাসিবাদ যেকোনো সুযোগ নিতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।
শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক মন্ত্রী শহীদ আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ (রাহি.) এর সুযোগ্য সন্তান জনাব আলী আহমাদ মাবরুর, শহীদ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (রাহি.) এর সন্তান জনাব মাসুদ সাঈদী, জুলাই বিপ্লবের শহীদ ফারহানুল ইসলামের পিতা এবং শহীদ আসাদের স্ত্রী সহ অন্যান্য শহীদদের পরিবারের গর্বিত সদস্যবৃন্দ।
মতবিনিময় সভায় কূটনৈতিক কোরের সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রধান, বিভিন্ন সামাজিক, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী জুলুমের শিকার হয়ে শাহাদাতবরণকারীদের সন্মানিত পরিবারের সহস্রাধিক সদস্য এবং অর্ধ সহস্রাধিক আহত ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
Discussion about this post