বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা: শফিকুর রহমান বলেন, ৮ই ফাল্গুন ভাষা শহীদরা মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় যে আত্মোৎস্বর্গের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন তা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। জাতির যুবক এবং তরুণেরা বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন গড়ে তুলে ভাষার অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করেছিল। অথচ বিজাতীয় আগ্রাসনে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি আজ অরক্ষিত। বাংলা ভাষাকে যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য দেশের সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করে বিজাতীয় শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন থেকে বাংলা ভাষাকে হেফাজত করতে হবে। বাংলা ভাষার মর্যাদা ও নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষায় আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্ঠা চালাতে হবে। তাহলেই ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্বপ্ন সার্থক হবে।
বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করতে যারা জীবন দিয়েছেন জাতি তাদেরকে চিরদিন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। তিনি তাদের মাগফিরাতের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন এবং শহীদদের পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর মন্জুরুল ইসলাম ভুইয়া, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহঃ সেক্রেটারি এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহঃ সেক্রেটারি যথাক্রমে দেলওয়ার হোসাইন, কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সবুর ফকির। আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী মুহাম্মদ আবদুল জব্বার,মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য যুবনেতা কামাল হোসাইন, শ্রমিক নেতা আব্দুস সালাম, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. আব্দুল মান্নান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিশে শুরা সদস্য আবদুর রহমান, এডভোকেট জসীম উদ্দিন তালুকদার, শেখ শরীফ উদ্দিন আহমদ প্রমূখ।
ডা: শফিকুর রহমান আরো বলেন, হীনমন্য জাতী কখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনা। আমরা আত্মমর্যাদাশীল জাতী। ভাষার অধিকার আদায়ে ৪ জন জীবন দিয়েছেন অথচ আজ জনগণের সকল অধিকারকে হরণ করা হয়েছে। কোন অধিকার লড়াই ও সংগ্রাম ছাড়া আদায় করা যায়না। আর যারা আল্লাহকে ভয় করে তারা অবশ্যই মানুষের মুক্তির জন্য, তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। আজ ইতিহাসকে বিকৃত করা হচ্ছে। অথচ ইতিহাস সবসময় বদলায়, তা কোন এক জায়গায় কখনো স্থির থাকেনা। ভাষা সৈনিক মরহুম অধ্যাপক গোলাম আযম সহ শহীদ জামায়াত নেতৃবৃন্দের ব্যাপারে এই ভূ-খন্ড ও ইতিহাস কথা বলবেই ইনশাআল্লাহ। আমরা মজলুম এবং পরীক্ষার ময়দানে আছি। সেই ময়দানে আমরা দৃঢ়ভাবে টিকে থাকবো ইনশাআল্লাহ। আমরা সামাজিকভাবে, চারিত্রিকভাবে ও নৈতিকভাবে সচ্ছ ফলে আমরা বুক উঁচু করে চলবো, ইনশাআল্লাহ। ৮ই ফাল্গুনের অংগীকার আমরা মাথা নত করবো না এবং অধিকার আদায়ের সংগ্রামে পিছপা না হয়ে সামনে এগিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, মহান একুশের চেতনায় স্বাধীনতার আন্দোলনের উন্মেষ ঘটে। ১৯৭১ সালে মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমে তা পূর্ণতা লাভ করে। মূলতঃ ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল শেখ আবুল কাশেমের নেতৃত্বে তমুদ্দন মজলিশের মাধ্যমে। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও ডাকসুর সাবেক জিএস অধ্যাপক গোলাম আযম মহান ভাষা আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। অধ্যাপক গোলাম আযম রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ডাকসুর জিএস হিসাবে লিয়াকত আলীর খানের কাছে স্মারকলিপি পেশ করেছিলেন। মূলতঃ ইসলমপন্থীরাই ছিলেন ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্বে। ২১ ফেব্রুয়ারী এলে সরকারী এমপি মন্ত্রীরা বাংলাভাষার সুরক্ষা ও বিজাতীয় আগ্রাসন প্রতিরোধের কথা বল্লেও প্রকৃত পক্ষে এ ব্যাপারে সরকারী কোন উদ্যোগ গ্রহন করতে দেখা যায়নি। হরেক রকম ভাষা ও সংস্কৃতির ভীড়ে বাংলাভাষার অবস্থা দিন দিন নাজুক হয়ে পড়ছে। বাংলা ভাষার যে সমৃদ্ধি রয়েছে তা বিশ্ব দরবারে স্বৃীকৃিত। তাই আজ সময়ের দাবী দেশের সর্বত্র বাংলা ভাষার প্রচলন বাধ্যতা মূলক করা এবং বিজাতীয় ভাষার আগ্রাসন প্রতিরোধে রাষ্ট্রীয় ভাবে ভাষার সুরক্ষা ও সমৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহন করা। ভাষা ও নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষায় আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মূলতঃ ২১শের অধিকার আদায়ের চেতনাকে ধারণ করেই দেশ থেকে স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ ও অগণতান্ত্রিক শক্তিকে রুখে দিয়ে দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন, সাম্য ও মৈত্রী প্রতিষ্ঠায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
আলোচনা সভা শেষে মহান ভাষা আন্দোলনে নিহত শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।