বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ আবু তাহের ৭১ বছর বয়সে ৯ মে রাত সাড়ে ১০টায় ইন্তিকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না-ইলাইহি রাজিঊন)। তিনি দীর্ঘ দিন যাবত বার্ধক্যসহ নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন। তিনি স্ত্রী, ২ পুত্র ও ২ কন্যাসহ বহুআত্মীয়-স্বজন রেখে গিয়েছেন।
৯ মে দিবাগত রাত পৌণে ২টায় রাজধানী ঢাকার মগবাজারস্থ বাসায় তার প্রথম সালাতে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। সালাতে জানাযায় ইমামতি করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। উক্ত সালাতে জানাযায় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর জনাব মুহাম্মাদ সেলিম উদ্দিন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের হাতিরঝিল পশ্চিম থানা শাখা জামায়াতের আমীর জনাব মুহাম্মাদ আতাউর রহমান সরকার, হাতিরঝিল পূর্ব থানা শাখা জামায়াতের আমীর এডভোকেট জিল্লুর রহমানসহ আরো অনেক স্থানীয় জামায়াত নেতৃবৃন্দ। ১০ মে সকাল ৭টায় মাওলানা আবু তাহেরকে তার চট্টগ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। চট্টগ্রাম মহানগরী শাখা জামায়াতের আমীর মাওলানা মুহাম্মাদ শাহজাহানের ইমামতিতে চট্টগ্রামের ডেন্টাল হাসপাতালে দ্বিতীয় সালাতে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা আনম শামসুল ইসলামের ইমামতিতে তৃতীয় সালাতে জানাযা শেষে মাওলানা মুহাম্মাদ আবু তাহেরকে চট্টগ্রামের নিজ বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
শোকবাণী
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ আবু তাহেরের ইন্তিকালে গভীর শোক প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান ১০ মে এক শোকবাণী প্রদান করেছেন।
শোকবাণীতে তিনি বলেন, “অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ আবু তাহের একজন বলিষ্ঠ ও দক্ষ সংগঠক ছিলেন। ছাত্র জীবন থেকেই তিনি ইসলামী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন। তিনি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন। তার নেতৃত্বে ১৯৮১ সালে শিবিরের জাতীয় কর্মী সম্মেলন বাংলাদেশে জাগরণ সৃষ্টি করে। ছাত্র জীবন শেষে তিনি চট্টগ্রাম থেকে কর্ম জীবন শুরু করেন। কর্মজীবনে তিনি জামায়াতের চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রথমে সেক্রেটারি ও পরে আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একটানা ১৪ বছর চট্টগ্রাম মহানগরীর আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে ইসলামী আন্দোলন এক শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত হয়। সংগঠন গড়ে তোলার পাশাপাশি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তার সাহসী ও দৃঢ় ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ইসলামী ঐক্যের লক্ষ্যে তিনি চট্টগ্রামের আলেম-উলামা ও ধর্মীয় ব্যক্তিদের সাথে ব্যাপক যোগাযোগ গড়ে তুলেন।
তিনি একজন খ্যাতিমান আলেম হিসেবে দ্বীনের প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। একজন দা’য়ী ইলাল্লাহ হিসেবে তিনি মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান জানিয়েছেন। তিনি মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। তার গড়া প্রতিষ্ঠানসমূহ দেশ ও জাতির কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের সাথে মাওলানা আবু তাহেরের নাম অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। প্রতিটি আন্দোলনে তার ভূমিকা আন্দোলনকে উজ্জীবিত করেছে। তিনি তার উদার, নম্র-ভদ্র ব্যবহার ও আচরণের জন্য চট্টগ্রামে সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিতে পরিণত হন। ২০০১ সাল থেকে তিনি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৮ সালে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ৯ মে রাতে তিনি মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নেন।
তার মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। আমি মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট বিনীতভাবে দোয়া করছি তিনি যেন মাওলানা মুহাম্মাদ আবু তাহেরের সকল খেদমত কবুল করে নেন। তার ভুল-ত্রুটিসমূহ ক্ষমা করেন। তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসে উচ্চ মর্যাদা দান করেন।
আমি তার শোক-সন্তপ্ত পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি এবং মহান আল্লাহর নিকট দোয়া করছি তিনি যেন তাদেরকে উত্তম ধৈর্য ধারণ করার তাওফিক দান করেন।”