যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, যশোর পশ্চিম সাংগঠনিক জেলা শাখা জামায়াতের নায়েবে আমীর, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন, পদ্মবিলা ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুহাদ্দিস আবু সাঈদ মুহাম্মাদ শাহাদাৎ হোসাইন ৩০ মে অনলাইনে একটি দ্বীনি আলোচনায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন। আলোচনা শেষ হওয়ার পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয়। বেলা সাড়ে ৩টায় সেখানেই তিনি মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। তিনি স্ত্রী, ৩ পুত্র ও ২ কন্যাসহ বহু আত্মীয়-স্বজন রেখে গিয়েছেন। উনার ছোট ভাই কিশোর কন্ঠের সম্পাদক কবি মোশাররফ হোসেন খান। ৩১ মে সকাল সাড়ে ৯টায় ঝিকরগাছা এমএল হাইস্কুল মাঠে প্রথম সালাতে জানাযা এবং সকাল ১১টায় উনার নিজ গ্রাম বাঁকড়ায় দ্বিতীয় সালাতে জানাযা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
শোকবাণী
অধ্যক্ষ মুহাদ্দিস আবু সাঈদ মুহাম্মাদ শাহাদাৎ হোসাইন ইন্তিকালে গভীর শোক প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান ৩০ মে ২০২০ এক শোকবাণী প্রদান করেছেন।
শোকবাণীতে তিনি বলেন, অধ্যক্ষ মুহাদ্দিস আবু সাঈদ মুহাম্মাদ শাহাদাৎ হোসাইন ছিলেন একজন জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন আপামর জনসাধারণের খুবই কাছের একজন মানুষ। তিনি চারদলীয় জোট সরকারের আমলে এমপি থাকাকালে বহু স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, ব্রীজ-কালভার্ট, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ করে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেন।
আমি তার ইন্তিকালে গভীর শোক প্রকাশ করছি। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার খেদমতসমূহ কবুল করে তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসে উচ্চ মাকাম দান করুন এবং তার শোকাহত পরিবার-পরিজনদেরকে এ শোক সহ্য করার তাওফিক দান করুন।
সংক্ষিপ্ত পরিচিত
যশোরের পদ্মবিলা ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মুহাদ্দিস আবু সাঈদ ২০০১ সালে ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে ১ লক্ষ ৩৭ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে সাবেক বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রফিকুল ইসলামকে প্রায় ২০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। ২০০৮ সালের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে ১ লক্ষ ২২ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে সামান্য ভোটের ব্যবধানে সাবেক আইসিটি মন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদের নিকট পরাজিত হন।
তিনি নির্বাচনী এলাকায় মুহদ্দিস আবু সাঈদ হিসেবেই সমধিক পরিচিত। নির্বাচনী এলাকার জনসাধারণের কাছে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে সংসদ সদস্য থাকাকালে তিনি রাষ্ট্রীয় সফরে অষ্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে তার খরচের বেঁচে যাওয়া টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরৎ দিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেন। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রমের নেতৃত্ব দেন। তাঁর সময়ে চৌগাছা-ঝিকরগাছার স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা মিলিয়ে ৭২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়। এছাড়াও বিভিন্ন রাস্থা-ঘাট, মসজিদ-মন্দির ছাড়াও তার সময়েই চৌগাছা ঝিকরগাছার ২২টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ১৮টি ইউনিয়ন পরিষদে কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। এক এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকে শুরু করে মহাজোট এবং বর্তমান সরকারের সময়েও চিরুনী অভিযান চালিয়েও তা কোনো দুর্নীতি খুঁজে পাওয়া যায়নি। যেটি নির্বাচনী এলাকার মানুষের কাছে তাকে আরো জনপ্রিয় করে তুলেছে।