বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মতো নিয়ামতপূর্ণ সংগঠনে শামিল হওয়ার কারণে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি, আলহামদুলিল্লাহ। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তার ঐতিহাসিক দীর্ঘ পথচলায় নানাবিধ বাঁধা অতিক্রম করে আজ এখানে উপনীত হয়েছে। আমাদের সংগঠনের চলার পথটি মোটেই সহজ ছিলো না। জন্মলগ্ন থেকেই বিভিন্ন কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর কালো মেঘ ও অমানিশা আমাদের যাত্রাকে বারবার আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। আমাদের সামনে হাজারো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে তারা। আলহামদুলিল্লাহ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশের মানুষের ভালোবাসায় আজ সিক্ত। নানা ষড়যন্ত্র প্রপাগান্ডা অপপ্রচার করেও যখন পারা গেল না, তখন গায়ের শক্তিতে অন্যায়ভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে প্রয়োগ করে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ সহ অসংখ্য নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। আমাদের সহকর্মীরা আল্লাহ তায়ালার মেহেরবানীতে সকল সামাজিক অপরাধ চাঁদাবাজি সহ ক্ষুদ্র যেকোন শাস্তিযোগ্য অপরাধ থেকেও মুক্ত। আমাদের উদ্দেশ্য একটাই মহান আল্লাহ তায়ালার কুরআনের বিধান অনুযায়ী একটি অনিন্দ্যসুন্দর সমাজ গঠন। এজন্য জামায়াত ইসলামী তার প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে।
তিনি শুক্রবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত রুকন (সদস্য) সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। সম্মেলনটি ভার্চুয়াল মাধ্যম জুম ও ইউটিউব লাইভের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জননেতা নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল ও সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, কেন্দ্রীয় সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম ও মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, মুহা. দেলাওয়ার হোসাইন ও আবদুল জব্বার প্রমূখ সহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান অথচ এই সমাজকে তাঁর আকিদা বিশ্বাসের যায়গা থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য সীমাহীন ষড়যন্ত্র চলছে। একজন মুসলমানের পারিবারিক জীবন, সমাজের সাথে তার ব্যবহার, মানুষের কল্যাণের জন্য সে কি ভূমিকা রাখবে বা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহপাক মুসলিম হিসেবে তাঁকে যে দায়িত্ব বা কাজের নির্দেশনা দিয়েছেন সবকিছু ভুলিয়ে রাখার জন্য গভীর ষড়যন্ত্র বিদ্যমান। আমরা শপথের কর্মী, আল্লাহর গোলামী করার জন্য আমরা আত্ম-নিবেদিত। এজন্য কুরআনের বিধানের আলোকে নিজেকে তৈরী করে দেশ সমাজ ও জাতি গঠনে আমরা প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাবো। যারা সব সময় আমাদের বিরোধীতা করছেন, আমরা তাদেরকে আমাদের বন্ধু, ভাই-বোনের ন্যায় মনে করি। তাদের হেদায়াতের জন্য আমরা মহান রবের নিকট দোয়া অব্যাহত রাখবো। আমাদের মাঝে মাহে রামাদান সমাগত। আসুন আমরা এই মাসের পবিত্রতা রক্ষা করি। নিজেদের পরিশুদ্ধ করার জন্য ইবাদাত বন্দেগীতে মনোযোগী হই এবং মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়ার প্রচেষ্ঠা চালাই।
রুকনদের উদ্দেশ্যে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, পবিত্র কুরআনের ২টি স্থানে রুকন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কুরআনের সুরা হুদের ৮০ নাম্বার আয়াতে এবং সুরা আয যারিয়াতের ৩৯ নাম্বার আয়াতে রুকন শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। যার সরাসরি অর্থ বোঝায় শক্তি ও নেতৃত্ব। মৌলিক বিষয় হচ্ছে রুকন তথা পিলার যার উপরে স্থাপনাটি মজবুত ভাবে টিকে থাকে। সুতরাং প্রত্যেক রুকন (সদস্য) কে সংগঠনের পিলারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে।
মাওলানা এটিএম মাসুম বলেন, জামায়াতের একজন রুকন (সদস্য) হিসেবে মূলত রাসূল সা. এর দেখানো ও সাহাবায়ে কেরামের অনুসৃত পন্থায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদাতে আত্মনিয়োগ করতে হবে। এভাবেই আমরা আল্লাহর করুণা পেতে পারি আর আল্লাহ আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গেলেই কেবলমাত্র আমাদের প্রকৃত সফলতা নিশ্চিত হবে ইনশাআল্লাহ।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, করোনার মত ছোট্ট একটি ভাইরাসের কাছে আজ দুনিয়ার বড় বড় রাষ্ট্র সহ সকলেই হার মেনে যাচ্ছে। এটা থেকেও স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, সমগ্র বিশ্বের মালিক মহান আল্লাহ তা’য়ালা। আসমান জমিনের সমগ্র কর্তৃত্ব ও রাজত্ব্য একমাত্র তারই। সেই মহান রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি পাওয়ার জন্যই আমাদের সকল কাজ আঞ্জাম দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জামায়াতের রুকন (সদস্য) হিসেবে আমার কি দায়িত্ব? দায়িত্বের দাবী যথাযথভাবে আমি পালন করতে পারছি কিনা এ উপলব্ধি প্রত্যেক রুকন (সদস্য) কে করতে হবে। আমাদের উপলব্ধি এবং জবাবদিহির চেতনা যদি লালন করতে না পারি তাহলে আমি শপথের একজন কর্মী হিসেবে সে দাবী পূরণে ব্যর্থ। সংগঠনের শপথের বা কমিটমেন্টের জনশক্তি হিসেবে আমাদেরকে সংগঠন নির্ধারিত সময় পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগাতে হবে। বর্তমান সময়ের দাবী হিসেবে একজন রুকনকে অবশ্যই তথ্য প্রযুক্তির জ্ঞানে সমৃদ্ধ হতে হবে এবং নিজের ম্যানেজমেন্ট কোয়ালিটিকে আরও সমৃদ্ধ করতে হবে। পেশাগত ও ব্যাক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে যে সব কর্মসূচী আসবে সেগুলোতে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে হবে। যেন নিজেকে মানবসম্পদে পরিণত করার মধ্য দিয়ে দুনিয়ার পরিবর্তন সাধন করার যোগ্যতা অর্জন এবং পাশাপাশি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার লক্ষ্যে যাবতীয় কর্মতৎপরতা বজায় রাখা যায়। তিনি ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে ঈমানদারদেরকে সকল বিভ্রান্তির মোকাবেলায় একটি ভারসাম্যপূর্ণ পন্থা অবলম্বন করে ভূমিকা রাখার জন্য উদাত্ত আহবান জানান।