বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, পবিত্র আশুরা মানব ইতিহাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও ঘটনাবহুল অধ্যায়ের সাক্ষী। বিশেষভাবে আশুরার দিনের ‘শহীদে কারবালা’র ঘটনা মুসলিম উম্মাহকে এক বিয়োগান্তক ও শোকাবহ ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ৬১ হিজরির ১০ মহররমের এই দিনে ইরাকের কুফা নগরীর অদূরে কারবালা প্রান্তরে রাসুল (সা.) এর প্রাণপ্রিয় দৌহিদ্র ইমাম হোসাইন বিন আলী (রা.) ইয়াজিদ বাহিনী কর্তৃক পরিবার-পরিজন ও ৭২ জন সঙ্গীসহ নির্মমভাবে শাহাদতবরণ করেন। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য এমন আত্মোৎসর্গের ঘটনা বিশ্ব ইতিহাসে নজীরবিহীন। তিনি পবিত্র কারবালার শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্যায়, অবিচার ও জুলুম-নির্যাতন মোকাবেলায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
তিনি আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদশে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত ‘পবিত্র আশুরার শিক্ষা ও তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহা. রেজাউল করিমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মুসা, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি লস্কর মোহাম্মদ তসলিম ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য নাজিম উদ্দীন মোল্লা প্রমূখ।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, উমাইয়া শাসক ইয়াজিদের অন্যায় সিদ্ধান্ত মেনে না নেয়ার কারণেই হযরত হোসাইন (রা.) এর সাথে সংঘাত অনিবার্য হয়ে ওঠে। সম্মূখ যুদ্ধে সুবিধা হবে না জেনেই স্বৈরাচারি ইয়াজিদ ইমাম হোসাইন (রা.) এর সাথে প্রতারণার আশ্রয় নেয়। একটি সমঝোতায় পৌঁছার জন্য তাকে কুফায় আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু পথিমধ্যে ইমাম হোসাইন, তার পরিবার-পরিজন ও সঙ্গীরা ইয়াজিদ বাহিনী কর্তৃক অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। ইমাম হোসাইন (রা.) শত্রুবাহিনীর ওপর বীর বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং অসীম বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে শাহাদাত বরণ করেন। ইসলামের ইতিহাসে মর্যাদাপূর্ণ আশুরা বিভিন্ন ঘটনাপুঞ্জে সমৃদ্ধ হলেও সর্বশেষে সংঘটিত কারবালা প্রান্তরে হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদতই এ দিবসের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। মূলত আশুরার এই দিনটিই ইতিহাসে অধিক স্মরণীয়।
তিনি বলেন, আশুরার দিন শুধু উম্মতে মোহাম্মদীর জন্যই নয় বরং পূর্ববর্তী উম্মতের কাছেও একটি মর্যাদাপূর্ণ দিন হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। ১০ মহররম আশুরার দিনেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আকাশ, বাতাস, পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, জান্নাত-জাহান্নাম, লাওহে মাহফুজ ও যাবতীয় সৃষ্টি জীবের আত্মা সৃজন করেছেন। হযরত আদম (আ.) এর সৃষ্টির দিনও ছিল ১০ই মুহাররম। হযরত নূহ (আ.) এর নৌকা ৮০জন সহচর নিয়ে যেদিন নিরাপদে জুদী পর্বতে অবতরণ করেছিল সে দিনটিও ছিল এই দিন। এভাবে হযরত ইউসুফ (আ.) এর কুপ থেকে উদ্ধার, আইয়ুব (আ.) এর আরোগ্য লাভ, হযরত ইউনুস (আ.) এর মৎস উদর হতে মুক্তি লাভ, মূসা (আ.) এর পরিত্রাণ, হযরত ইবরাহিম (আ.) নমরুদের অগ্নিকুন্ড থেকে মুক্তি পেয়ে ছিলেন আশুরার দিনে। তাই আশুরার দিন বিভিন্ন দিক থেকেই গুরুত্ব বহন করে।
তিনি আরও বলেন, মুসলিম উম্মাহ আজ ইসলামের সেই গৌরবৌউজ্জ্বল অতীত ভুলে যেতে বসেছে। ত্যাগ, নিষ্ঠা ও কুরবানীর শিক্ষা হারিয়ে আত্মপুঁজা ও ইন্দ্রীয়পরায়ণতায় লিপ্ত হয়েছে। সবকিছুই এখন অশুভ শক্তির নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। একটি অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসীবাদী শক্তি দেশ ও জাতির ঘাড়ে জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসেছে। তারা গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের নামে গণমানুষের সাথে প্রতরণা ও প্রহসনের আশ্রয় নিয়েছে। তাই এই স্বৈরাচারি, ফ্যাসিবাদী ও গণবিরোধী সরকারের হাত থেকে দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে হলে পবিত্র আশুরার চেতনায় সকলকে উজ্জীবিত হতে হবে। তিনি অগণতান্ত্রিক ও নব্য বাকশালী সরকারের জুলুম-নির্যাতন মোকাবেলায় এবং দেশে জনগণের ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালানোর আহ্বান জানান।