বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, “ইসলাম আল্লাহর অশেষ নেয়ামত। মানবতার কল্যাণে এ দ্বীন এসেছে। নবীগণ এ দ্বীন প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পালন করেছেন। আমাদেরকে তাদের পথেই দ্বীনের দাওয়াত দিতে হবে। প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে দ্বীনের প্রচারকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। দ্বীনের দাঈদের হয়রানি করা হচ্ছে। একের পর এক ইসলাম বিরোধী আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে মদের লাইসেন্স প্রদান সর্বশেষ নজীর। দেশে ইসলামী শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র চলছে। এ যড়যন্ত্র রুখে দিতে দেশপ্রেমিক ইসলামী শক্তি ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, মৌলিক মানবাধিকার ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশা পূরণে জনগণকে এখনও সংগ্রাম করতে হয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা। জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে একদলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার ক্ষমতা আঁকড়ে থাকায় মানুষের দুর্দশা বাড়ছে। জবাবদিহিতা না থাকায় কর্তৃত্ববাদী শাসনে অভ্যস্থ হয়ে উঠছে ক্ষমতাসীনরা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে জামায়াতের পথ কখনও মসৃণ ছিল না। বাধা-বিপত্তি সাথে নিয়েই জামায়াতকে চলতে হয়েছে। সাহাবায়ে ইজাম দ্বীনের পথে সীমাহীন ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আমাদেরও সে পথেই হাঁটতে হবে। ত্যাগ ও কুরবানীর নজরানা পেশ করতে হবে। ভ্রাতৃত্বের মজবুত ভিত গড়ে তুলতে হবে। ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। রুকনদের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, মানবতার মুক্তির জন্য কুরআনে বর্ণিত গুণাবলীতে নিজেদের সাজাতে হবে। বলবানদের আগ্রাসনে দুর্বলরা আজ অসহায়। ইউক্রেনে মানবতা বিপর্যয়ের মুখে। অন্যায় এ যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানান তিনি।”
২৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামী নরসিংদী জেলা শাখার উদ্যোগে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে আয়োজিত এক সদস্য সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন।
তিনি আরোও বলেন, “জামায়াতে ইসলামী নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জনসাধারণের মধ্যে কাজ করে যাচ্ছে। জনগণের আস্থার সংকট দূর করতে জামায়াতের নেতা কর্মীদের এগিয়ে আসতে হবে। মজবুত সংগঠন কায়েম করে ও জনশক্তি উন্নত মানের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অর্জন করে ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার কাজকে জনগণের দোর গোড়ায় পৌঁছে দিতে যথাযথ ভূমিকা রাখতে হবে। মনে রাখবেন জুলুম নিপীড়ন, মামলাসহ শত নির্যাতন করে জামায়াতকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায়নি, যাবেও না। জনগণের প্রকৃত মুক্তির জন্য গণতন্ত্র ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় অতীতের মতোই জামায়াত নিরলসভাবে কাজ করে যাবে, ইনশাআল্লাহ।”
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি জনাব হামিদুর রহমান আযাদ, নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব মোঃ সাইফুল আলম খান মিলন এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য জনাব আব্দুল জব্বার। জেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক আমজাদ হোসাইনের সঞ্চালনায় সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জেলা আমীর মাওলানা মোছলেহুদ্দীন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম বলেন, “রুকনগণ সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাদের মান-মর্যাদা শরীয়ত নির্ধারিত। দাওয়াত সম্প্রসারণ, দ্বীনকে প্রভাবশীল শক্তি সম্পন্ন করা ও ইসলামের ভিত্তি মজবুত করা রুকনের বড় কাজ। জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করা, পাপাচার থেকে বেরিয়ে এসে ইকামাতে দ্বীনের কাজকেই শক্তিশালী করতে হবে। সমাজ থেকে জুলুমের অবসান, লুটপাট ও দুর্নীতি রোধে ইসলামী সমাজ কায়েমের কোনো বিকল্প নেই। নিজেদের মধ্যেও প্রাচীর সম ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।”
জনাব মোঃ সাইফুল আলম খান মিলন বলেন, “সমাজ পরিবর্তনের বড় মাধ্যম মানব সেবা। জামায়াতের লোকজন সমাজসেবা করে আনন্দ বোধ করবে। সেবার কাজে জড়িত থাকার মানসিকতা আমাদের আরো বাড়াতে হবে। সাহাবীদের অনন্য নজির স্থাপন করতে হবে। আত্মীয়-স্বজনের হক ও প্রতিবেশীর হক আদায় এবং তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।”
বিশেষ অতিথি জনাব হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, “তৃণমূল নেতাদের সংগঠন পরিচালনায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে। সংগঠনকে মজবুত ও গণমুখী করে তুলতে কাক্সিক্ষত ভূমিকা রাখতে হবে। তৃণমূলের নেতৃত্বের উপরই আগামী দিনের ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। ইসলামের ছায়াতলে বিশুদ্ধ জীবন-যাপন করে ঈমানী শক্তি অর্জন করতে হবে।”
জনাব আব্দুল জব্বার বলেন, “কর্মীরা সংগঠনের প্রাণ। কর্মীদের সংখ্যা বাড়ার অর্থ হলো আন্দোলনের মজবুতি অর্জন। তাই জনশক্তি বৃদ্ধি করতে দায়িত্বশীলদের মনোসংযোগ দেওয়ার আহবান জানান। যেখানে ইসলামের জন্য রক্ত ঝরে, সেখানে ইসলামের শক্ত ঘাঁটি হয়। শীর্ষ নেতৃবৃন্দ জীবন দিয়ে দেশের মাটিকে উর্বর করে গেছেন।”