বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশের জনগণ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন চায়। আমরা দেখতে পাচ্ছি, বর্তমান সরকার একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেশবাসীকে উপহার দিতে মোটেও আন্তরিক নন। একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ না হলে, জনগণ প্রহসনের নির্বাচন কাউকে করতে দিবে না। যদি সরকার জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই নির্বাচন করার চিন্তা করে, তাহলে জনগণ আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাবে।
চট্টগ্রাম অঞ্চল আয়োজিত দুই দিনব্যাপী শিক্ষাশিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ডা. শফিকুর রহমান।
চট্টগ্রাম মহানগরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা, উত্তর জেলা, কক্সবাজার জেলা, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলা শাখার কর্মপরিষদ সদস্যদের নিয়ে দুই দিনব্যাপী শিক্ষাশিবির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও চট্টগ্রাম অঞ্চল পরিচালক উপাধ্যক্ষ আব্দুর রবের সভাপতিত্বে এবং সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর মুহাম্মদ শাহজাহানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমরা নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পন্থায় কাজ করতে চাই। একটি দায়িত্বশীল সংগঠন হিসেবে দেশবাসী আমাদের কাছে অনেক কিছু প্রত্যাশা করে। তিনি নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে বলেন, দেশবাসী এ সরকারের প্রতি আস্থা হারিয়েছে। জামায়াত জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করে, তাই জনগণের দাবী আদায়ের আন্দোলনে জামায়াত সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে দেশের বড় সমস্যা হল বিদ্যুৎ ও বন্যা সমস্যা। আমরা বন্যাদুর্গত এলাকায় বিভিন্ন ধরনের জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। পুনর্বাসন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। বর্তমান সরকার নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের সীমা অতিক্রম করেছে। তারা বিদ্যুতে লোডশেডিং দিয়ে ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্য বাড়িয়ে জনগণকে কষ্ট দিচ্ছে। দেশবাসী অনাহারে দিন কাটায় অথচ তারা বলে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করা পর্যন্ত দেশের এসব সমস্যার সমাধান হবে না।
নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের চূড়ান্ত গন্তব্য হলো, মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে জান্নাতের উপযোগী করে নিজেদের গঠন করা। ইসলামী আন্দোলনের কর্মী হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে জান্নাত যদি নিজেদের চূড়ান্ত জায়গা হিসেবে তৈরী করতে না পারি তবে আমাদের জীবনের সফলতা কোথায়? তাই নিজেদের ত্যাগ-কুরবানীর মাধ্যমে বাতিলের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে, শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে যদি নিজেদের জীবন পরিচালনা করতে পারি তবেই চূড়ান্ত সফলতা ধরা দিবে, ইনশাআল্লাহ।
আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য সবাইকে প্রস্তুতির আহ্বান জানিয়ে আমীরে জামায়াত বলেন, জুলুমতন্ত্র ও কর্তৃত্ববাদী শোষকদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য জাতীয় ঐক্যের কোন বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেন, জামায়াত নেতৃবৃন্দকে হালাল আয় ও পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন করতে হবে। যা নিজের জন্য পছন্দ তা অন্যের জন্যও পছন্দ করতে হবে। সাহাবী আজমাঈনরা নিজে না খেয়ে অপরকে মেহমানদারি করেছেন। আমাদেরকে চলাফেরায় সাহাবীদের জীবন অনুসরণ করতে হবে।
ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মা’ছুম বলেন, আম্বিয়া কেরামগণ তাঁদের দায়িত্ব পালনে সদা তৎপর ছিলেন। নবী আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালামরা মানবতার কল্যাণে কাজ করতেন, তাঁরা কোন বিনিময় নিতেন না। তাদের বিনিময় ছিল মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। কঠিন পরিস্থিতি অতিক্রম করে নবী আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালামরা এগিয়ে গেছেন। তাঁরা মানুষের গোলামী বাদ দিয়ে মহান আল্লাহর গোলামীর দাওয়াত দিতেন। তাঁরা জাতিকে পাপাচার সম্পর্কে সতর্ক করতেন। নবীগণ দ্বীন কায়েম করার জন্য মজবুত সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। তাঁদের মত দরদ ভরা মন নিয়ে আমাদেরকেও ব্যাধিগ্রস্ত লোকগুলোকে এগিয়ে নিতে হবে।
সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, জামায়াত বর্তমানে জুলুম-নির্যাতন ও সন্ত্রাসের শিকার। রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। মানবতার সেবায় দেশ পরিচালনার মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সাংগঠনিক কাঠামোকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে উপাধ্যক্ষ আব্দুর রব বলেন, জামায়াত প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অনেক নির্যাতন-ঝড় অতিক্রম করে জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের শেষ নেই। জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাস হচ্ছে- নির্যাতন ও শাহাদাতের ইতিহাস। নেতৃবৃন্দকে শহীদ করলেও আমাদের কাজ থেমে নেই। যুগ-যুগ ধরে ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেকেই শাহাদাত বরণ করেছেন, পঙ্গু হয়েছেন। তারপরও আমাদের কাজ অব্যাহত আছে। তিনি নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে সংগঠনের দাওয়াত অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
উক্ত শিক্ষাশিবিরে দারসুল কুরআন পেশ করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, দারসুল হাদীস পেশ করেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক। এতে আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক আহসানুল্লাহ ভুঁইয়া, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আমীর জনাব জাফর সাদেক, চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সাবেক আমীর অধ্যক্ষ আমিরুজ্জামান, কক্সবাজার জেলার সাবেক আমীর মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।