বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আল্লাহ তা’য়ালা মানুষকে সকল জাতির থেকে উত্তম জাতি হিসেবে পয়দা করেছেন। উত্তম হওয়ার জন্য কিছু গুণ আল্লাহ তা’য়ালা মানুষের মধ্যে দানও করেছেন। আর তার অন্যতম হলো পরস্পরের জন্য কল্যাণকামী হওয়া। আল্লাহ তা’য়ালা আরো চান, যেখানেই মানুষের ক্ষতি কিংবা বিপদ সেখানেই মহান আল্লাহর প্রকৃত বান্দারা সাহায্যের জন্য হাজির হয়ে যাবে, এটাই মানবতার কাজ। এখন এ কাজটা চাইলেই কেউ পরিপূর্ণভাবে করতে পারবে না, এজন্য রাষ্ট্রশক্তি প্রয়োজন। যার হাতে এ রাষ্ট্রশক্তি আছে তিনি চাইলেই এই ভালো কাজটি শুরু করতে পারেন। যেমন- বর্তমানে যারা ক্ষমতাসীন আছে, তারা চাইলেই এ ভালো কাজটি করতে পারে। আমাদের কাছে যেহেতু রাষ্ট্রশক্তি নেই, তাই আমরা চাইলেও সে কাজটি পরিপূর্ণভাবে করতে পারবো না। আমাদের হাতে যদি এই সুযোগ আল্লাহ তা’য়ালা কখনো দান করেন, তখন আমরা চাইলে সেটি পরিপূর্ণভাবে করতে পারবো, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তা’য়ালা সেই ঘোষণাই দিচ্ছেন, সেরকম শক্তি তোমাদের হাতে থাকতে হবে, যেন ভালো কাজের প্রচলন তোমরা করতে পারো। আর সমাজের যত বাজে মন্দ কাজ আছে সব তোমাদের বন্ধ করে দিতে হবে। এ কাজটি করার জন্য তোমাদের মজবুত ঈমানের প্রয়োজন হবে।
তিনি আজ শনিবার সকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের তুরাগ উত্তর থানার উদ্যোগে আয়োজিত গত শনিবার (৬ আগস্ট) বেলা পৌনে ১২টার দিকে রাজধানী তুরাগের কামারপাড়া, রাজাবাড়ি পুকুরপাড় এলাকায় গাজী মাজহারুলের রিকশার গ্যারেজের ভেতরে গড়ে তোলা ভাঙাড়ির কারখানায় বিস্ফোরণে নিহত ৭টি পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন। সংগঠনের মহানগরী উত্তরের মজলিসে শুরা সদস্য ও তুরাগ উত্তর থানার আমীর জনাব এ.এইচ সরকারের সভাপতিত্বে ও থানা সেক্রেটারি মোঃ মতিউর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত প্রোগ্রামে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও মহানগরী আমীর জনাব মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। এছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মহানগরীর মজলিসে শুরা সদস্য ও উত্তরা মডেল থানার আমীর জনাব মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ নাঈম, তুরাগ মধ্য থানার আমীর গাজী মনির হোসেন ও সেক্রেটারি জনাব ফিরোজ আলম, একরামুল হক, আব্দুর রাকিব, এ্যাড. মনির হোসেন, মিজানুর রহমান, আব্দুল হাই ও মোজাম্মেল হোসেন প্রমূখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীরে জামায়াত আরো বলেন, আপনারা জানেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এদেশে মহান আল্লাহর আইন কায়েমের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এটা অনেকেরই পছন্দ হবে না এটাই স্বাভাবিক। যারা অপরাধী তারা কেন আল্লাহ তা’য়ালার আইন চাইবে? তারা তো চাইবেই, যে আইনে তারা অপরাধ করতে পারবে সেটিই বহাল থাকুক। আল্লাহ তা’য়ালার আইন তারাই চাইবে, যারা শান্তিতে-সম্মানের সাথে বসবাস করতে চায়, মর্যাদার সাথে বসবাস করতে চায়। সমাজের যেকোনো স্তরের মানুষই হোক না কেন, সবাই নিজের সম্মানটা যেন পায় তা নিশ্চিত করতে পারে একমাত্র মহান আল্লাহর দেয়া বিধান আল-কুরআন। আল্লাহ তা’য়ালার দেয়া বিধান- যে নিরাপত্তা, যে সম্মান দিতে পারবে, দুনিয়ার আর কোনো তন্ত্র, মন্ত্র ও শক্তি নাই সে নিরাপত্তা এবং সম্মান দিতে পারে। মানব রচিত কোন আইন তা নিশ্চিত করতে পারবে না বলেই আমরা মহান আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। তাছাড়া আমরা তো চূড়ান্ত বিবেচনায় মহান আল্লাহরই বান্দা। আপনারা জানেন, শুধুমাত্র এ কারণেই আমাদের সংগঠনের সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলদেরকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, মহান আল্লাহ তাঁদেরকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন। আমাদের নেতা-কর্মীদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, পঙ্গু করে ফেলা হয়েছে, হাজার-হাজার মামলা দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। তাই বলে দমে যাওয়ার পাত্র আমরা নই। আমরা মাজলুম তবে এতটা অসহায় নই যে, অন্য ভাই কষ্টে আছে তার পাশে আমরা দাঁড়াতে পারবো না। সেই দায়িত্ব থেকেই আপনাদের কাছে ছুটে চলে এসেছি। শুধু এখানেই নয় বাংলাদেশের যেখানেই দূর্ঘটনা ঘটুক না কেন, সেখানে পৌঁছানোর মত হলে আমরা সবার আগে সেখানে পৌছে যাই। মানুষের বিপদে কে পৌছালো আর কে পৌছালো না এটা আমরা দেখি না। আমরা শুধু মহান আল্লার কথাটিকে অনুসরণ করি। আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল সা. যেটাকে ভালো বলেছেন তা করতে আমাদের কোন জড়তা নেই। কল্যাণমূলক কাজে জামায়াতে ইসলামীর সকল কর্মী, সুধী-শুভাকাঙ্ক্ষী তাদের সাধ্যমত অর্থনৈতিক সাহায্য ক্রমাগত দিয়ে যাচ্ছেন।
আমীরে জামায়াত বলেন, আমাদের সকল জনশক্তিকে বলে দেওয়া আছে, যেকোন বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে সবার আগে পৌছানোর জন্য। সেটারই অংশ হিসেবে আজ আমরা এসেছি আপনাদের মাঝে। আজ এখানে উপস্থিত হয়ে আপনারা আমাদের প্রতি দয়া করেছেন আমরা কোন দয়া করিনি। আমাদের ডাকে আপনারা সাড়া না দিলেও পারতেন, আমাদের দাওয়াত কবুল নাও করতে পারতেন, আপনারা না এলে আমরা এই খেদমত করতে পারতাম না। এই খেদমত করার সুযোগ দিয়েই মূলত আপনারা আমাদের প্রতি মেহেরবানি করলেন। আমাদের দায়িত্ব ছিল ঘরে-ঘরে গিয়ে আপনাদের খোঁজ-খবর নেয়া। সেটাই হতো আপনাদের প্রতি যথার্থ সম্মান দেখানো।
পরিশেষে আমীরে জামায়াত বলেন, এখানে যারাই উপস্থিত হয়েছেন, কেউ নিজেকে গরীব ভাববেন না। যারই ঈমান রয়েছে সেই ধনী বরং যার বুকে ঈমান নেই সেই প্রকৃত গরীব। সম্পদ খুবই ক্ষণস্থায়ী, যা আল্লাহ তা’য়ালা যাকে খুশি দিতেও পারেন আবার যার কাছ থেকে ইচ্ছা তা ছিনিয়ে নিতেও পারেন। তাই মুমিন বান্দা কখনোই সম্পদের মোহ করে না। দেশের যেকোনো স্তরের মানুষকে ছোট করে দেখা উচিত নয় বরং আমরা সমাজে যাদেরকে নিচু স্তরের ভাবি তারাই মূলত এই দেশটাকে পরিচালনা করছেন। আর আমরা যেদিন প্রত্যেককে তাদের অবদানের কথা মূল্যায়ন করে সম্মান জানাতে পারবো সেদিনই এই সমাজের কপাল খুলে যাবে, ইনশাআল্লাহ। আপনারা আমাদের প্রতি দয়া করেছেন এজন্য আপনাদের আবারো ধন্যবাদ জানাই। আপনাদের পরিবারে আমাদের সালাম পৌঁছিয়ে দিবেন। আর আমাদের এই মাজলুম সংগঠনের জন্য বেশি বেশি দো’য়া করবেন। জুলুমের এ রাজ্য থেকে মহান আল্লাহ আমাদের জাতিকে মুক্তি দিন। আমীন॥
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ইসলাম সব সময় ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দেয়। মুমিন মাত্রই একে অন্যের ভাই। কোনো ভাই অসুস্থ বা আহত হলে কিংবা কোনো ক্ষতি বা বিপদের সম্মুখীন হলে অপর ভাই তার সাহায্যে এগিয়ে আসবে। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে বলা হয়েছে, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই।’ (সূরা হুজরাত, আয়াত-১০) অনত্র বলা হয়েছে, ‘ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক।’ (সূরা তওবা, আয়াত-৭১)। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন, যে তার বান্দাদের প্রতি দয়া করে।’ (সহীহ আল বোখারি, হাদিস-১৭৩২)। তাই বিপদগ্রস্ত মানুষের কল্যাণে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
উল্লেখ্য নিহত ৭টি পরিবারের প্রত্যেক পরিবারকে নগদ অর্থ তাদের হাতে তুলে দেন আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান। এছাড়াও নিহত একজন রিক্সাচালক মোঃ মিজানুর রহমানের স্ত্রী মোছাঃ জহিরন বেগম অন্তঃস্বত্তা। এখন থেকে তার সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত বিপদগ্রস্ত এ পরিবারটিকে নিয়মিত আর্থিক সহযোগিতা করার আশ্বাস প্রদান করেন আমীরে জামায়াত।