বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশে আজ বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। এজন্য নানা কালা কানুন তৈরি করা হয়েছে। অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। সরকারী মহল থেকে অর্থ ব্যবস্থাপনা নিয়ে যা বলা হচ্ছে, তার সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই। তারা দুর্নীতি, লুটপাট করে হাজার-হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। মূলত: এ দেশকে ব্যর্থ অর্থনীতির রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এভাবে দেশ চলতে পারে না। দেশের এই অবস্থায় জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা বসে থাকতে পারে না। নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে এই জুলুমবাজ সরকারকে বিদায় জানাতে হবে। আমাদের এ আন্দোলন হবে যৌক্তিক, নিয়মতান্ত্রিক এবং শান্তিপূর্ণ। কোনো অসৎ লোক যদি আমাদের এ আন্দোলনে বিভ্রান্ত করতে আসে, তাহলে তা শক্ত হাতে মোকাবেলা করতে হবে। রাজধানীর নেতা-কর্মীরা যদি যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে, তাহলে সরকারের বিদায় ঘন্টা সময় মতোই বাজবে, ইনশাআল্লাহ।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর এক মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শূরার এক বিশেষ অধিবেশনে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর শপথ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীরে জামায়াত উপরোক্ত কথা বলেন।
বাংলাদেশ জামায়াতের ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ও ঢাকা মহানগরী অঞ্চলের পরিচালক মাওলানা এটিএম মা’ছুমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শপথ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর জনাব মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর জনাব মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর জনাব আব্দুস সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, জনাব দেলাওয়ার হোসাইন, ড. আব্দুল মান্নান, মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য জনাব মোকাররম হোসেন ও সৈয়দ জয়নুল আবেদীন প্রমূখ।
উল্লেখ্য, রুকনদের গোপন ভোটে ২০২৩-২০২৪ কার্যকালের জন্য ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নির্বাচিত হয়েছেন এবং শপথ গ্রহণ করেছেন জনাব নূরুল ইসলাম বুলবুল। আয়োজিত অনুষ্ঠানে শপথ বাক্য পাঠ করান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান।
আমীরে জামায়াত আরো বলেন, আমাদের ভালোবাসাটা এমন হোক যেভাবে আল্লাহ তা’য়ালা চেয়েছেন। আমাদের সীসা ঢালা প্রাচীরের মতো হতে হবে। সকল মুলসমান একটি বিশ্ব। দাওয়াতের জন্য কোন নির্দিষ্ট এলাকা নেই। ৯২% শতাংশ মুসলমানের দেশ, বাংলাদেশ। ব্যক্তিগতভাবে ইসলাম পালনের পথ সংকোচিত হয়ে আসছে। এখন তাফসির মাহফিলগুলোতেও সঠিকভাবে হক্ব কথা বলা যাবে না। সম্প্রতি মাহফিলগুলো তদারক করার জন্য প্রশাসনের প্রতি নিদের্শনা জারি করা হয়েছে। এ নিয়ে অনাকাক্সিক্ষত পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, আমরা সব দিক থেকে অধিকারহারা। যে সব যুবকদের বয়স ২৪/২৫ বছর, ভোট কী জিনিস তারা তা দেখতে পারেনি। অথচ তারাই ভবিষ্যতে দেশ গড়ার কারিগর হবেন। পত্রিকার খবর থেকে জানা যায়, একটি শীর্ষ স্থানীয় ব্যাংক থেকে জালিয়াতের মাধ্যমে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে তুুলে নেয়া হয়েছে। যেটা আদায় হওয়ার সুযোগ নেই। এই কাজটা তারাই করেছে, যারা ডাকাতির ভূমিকায় অবর্তীণ হয়ে ব্যাংকগুলোর হর্তাকর্তা হয়ে বসেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, ক্ষমতাসীনদের এক ছাত্রনেতাই নাকি ২০০০ কোটি টাকা পাচার করেছে বলে দুদকই বলছে। তাহলে বাকীদের কী অবস্থা? তারা দুর্নীতি, লুটপাট করে হাজার-হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। কিন্তু এর দায় দায়িত্ব শুধু পাচারকারীরাই নিবে না। এর দায় ভোগ করতে হবে আজকে যারা শিশু তাদের থেকে শুরু করে দেশের জনগণকে। এখন এলসি খোলার ডলার নেই, এর দায় কার? মূলত: এ দেশকে ব্যর্থ অর্থনীতির রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আদালতে বিচার নেই। চাঁদাবাজীর কারনে মানুষ ব্যবসা করতে পারছে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের চরিত্র হননের আয়োজন করা হয়েছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় দুইটি মহিলা মহাবিদ্যালয়ে এ ধরনের সর্বনাশা কার্যক্রম সরকারী দলের নেত-াকর্মীদের ছত্রছায়ায় হয়েছে। এভাবে দেশ চলতে পারে না। দেশের এ অবস্থায় জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা বসে থাকতে পারে না। তিনি মরহুম অধ্যাপক গোলাম আযম রাহিমাহুল্লাহ, শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, মরহুম মকবুল আহমাদসহ শহীদ নেতৃবৃন্দের কথা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন এবং তাঁদের রেখে যাওয়া কাজ এগিয়ে নিতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি আগামী দিনের প্রতিটি মুহুর্তকে কাজে লাগানোর উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ব্যক্তিগত এজেন্ডা নয়, আমাদের বুঝে শুনে দায়িত্ব পালন করতে হবে। দুনিয়ার কোন মায়া আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। শহীদ নেতৃবৃন্দ তাঁদের জীবনের রক্ত দিয়ে আমাদের সেটাই দেখিয়ে গেছেন। চলমান আন্দোলনে আমরা মহান আল্লাহর দেয়া গাইড লাইনের বাইরে যাবো না।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা এটিএম মা’ছুম বলেন, “স্বৈরাচারী হিংস্র শক্তির মোকাবেলায় অধিকার বঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনকে সাজাতে হবে। আমরা আশা করছি, জুলুমের এ দীর্ঘ পথের অবসান হবে, ইনশাআল্লাহ। তাই জনগনের প্রত্যাশা পূরণে, দাবী আদায়ে আমাদের সামনের সারিতে থাকতে হবে।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জনাব মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, “ইসলামী আন্দোলন সবচেয়ে সমৃদ্ধ আন্দোলন। ওহী ভিত্তিক আন্দোলন জাহান্নাম থেকে মুক্তির একমাত্র পথ। এ আন্দোলনে সম্পৃক্ত সকলকে কুরআনের সাথে সম্পর্ক বাড়াতে হবে। সত্যের সাক্ষ্য হতে হবে। বর্তমান সময়টা এজন্য সবচেয়ে বেশী উপযুক্ত সময়।”
সভাপতির বক্তব্যে জনাব নূরুল ইসলাম বুলবুল তৃণমূলে গণভিত্তি অর্জনে ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “মহানগরীর প্রতিটি ঘরে ইসলামের দাওয়াত পৌছে দিতে হবে। প্রতিটি প্রেশী-পেশার মানুষকে ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসতে হবে। সামাজিক নেতৃত্ব গড়ে তোলার পাশাপাশি দক্ষতা ও যোগ্যতা বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। জগদ্দল পাথরের মতো জাতির ঘাড়ে চেপে বসা সরকারে হাত থেকে জনগনকে মুক্ত করতে কেন্দ্রীয় নিদের্শনার আলোকে তত্বাবধায়ক সরকারের দাবীর আন্দোলনে ঢাকা মহানগরী কার্যকর ভূমিকা পালন করবে, ইনশাআল্লাহ।”